স্বাভাবিক সংখ্যা ও ভগ্নাংশ
মানবসভ্যতার শুরুতেই মানুষ তার দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে গিয়ে গণনার প্রয়ােজন অনুভব করে। প্রথম অবস্থায় বিভিন্ন প্রতীক, সমান আকারের একই প্রকার বস্তু বা কাঠি এবং মাটিতে বা পাথরে দাগ দিয়ে প্রাণি বা বস্তুর হিসাব রাখা হতাে। কিন্তু সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে বেশি সংখ্যক প্রাণি বা দ্রব্যের হিসাব রাখার জন্য অন্য ধরনের প্রতীকের প্রয়ােজন দেখা দেয়। সেখান থেকে গণনারও জন্ম হয় এবং ক্রমান্বয়ে সৃষ্টি হয় এখনকার ব্যবহৃত সংখ্যা প্রতীকের ।
অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা – >
স্বাভাবিক সংখ্যার অঙ্কপাতন করতে পারবে।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রীতিতে অঙ্কপাতন করে পড়তে পারবে।
মৌলিক সংখ্যা, যৌগিক সংখ্যা ও সহ মৌলিক সংখ্যা চিহ্নিত করতে পারবে ।
বিভাজ্যতা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
২, ৩, ৪, ৫, ৯ দ্বারা বিভাজ্যতা যাচাই করতে পারবে।
সাধারণ ভগ্নাংশ ও দশমিক ভগ্নাংশের গ.সা.গু. ও ল.সা.গু. নির্ণয় করতে পারবে।
সাধারণ ভগ্নাংশ ও দশমিক ভগ্নাংশের সরলীকরণ করে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারবে।
অঙ্কপাতন
পাটিগণিতে দশটি প্রতীক দ্বারা সব সংখ্যাই প্রকাশ করা যায়। এ প্রতীকগুলাে হলাে : ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ০। এগুলােকে অঙ্কও বলা হয়। আবার এগুলাে সংখ্যাও। শূন্য ব্যতীত বাকি সংখ্যাগুলাে স্বাভাবিক সংখ্যা। এদের মধ্যে প্রথম নয়টি প্রতীককে সার্থক অঙ্ক এবং শেষেরটিকে শূন্য বলা হয়। সংখ্যাগুলাের স্বকীয় বা নিজস্ব মান যথাক্রমে এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত, আট, নয় ও শূন্য।
৯ অপেক্ষা বড় সব সংখ্যাই দুই বা ততােধিক অঙ্ক পাশাপাশি বসিয়ে লেখা হয়। কোনাে সংখ্যা অঙ্ক দ্বারা লেখাকে অঙ্কপাতন বলে। অঙ্কপাতনে দশটি প্রতীকই ব্যবহার করা হয়। দশ-ভিত্তিক বলে সংখ্যা প্রকাশের রীতিকে দশমিক বা দশগুণােত্তর রীতি বলা হয়। এ রীতিতে কয়েকটি অঙ্ক পাশাপাশি বসিয়ে সংখ্যা লিখলে এর সর্বাপেক্ষা ডানদিকের অঙ্কটি তার স্বকীয় মান প্রকাশ করে । ডানদিক থেকে দ্বিতীয় অঙ্কটি এর স্বকীয় মানের দশগুণ অর্থাৎ তত দশক প্রকাশ করে। তৃতীয় অঙ্কটি এর দ্বিতীয় স্থানের মানের দশগুণ বা স্বকীয় মানের শতগুণ অর্থাৎ, তত শতক প্রকাশ করে। এরূপে কোনাে অঙ্ক এক এক স্থান করে বামদিকে সরে গেলে তার মান উত্তরােত্তর দশগুণ করে বৃদ্ধি পায়। লক্ষ করি যে, কোনাে সংখ্যায় ব্যবহৃত অঙ্কগুলাের মান তার অবস্থানের উপর নির্ভর করে। সংখ্যায় ব্যবহৃত কোনাে অঙ্ক তার অবস্থানের জন্য যে সংখ্যা প্রকাশ করে, তাকে ঐ অঙ্কের স্থানীয় মান বলা হয়। যেমন, ৩৩৩ সংখ্যাটির সর্বডানের ৩ এর স্থানীয় মান ৩, ডানদিক থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ৩ এর স্থানীয় মান যথাক্রমে ৩০, ৩০০। তাহলে দেখা যাচ্ছে, একই অঙ্কের স্থান পরিবর্তনের ফলে স্থানীয় মানের পরিবর্তন হয়। কিন্তু তার নিজস্ব বা স্বকীয় মান একই থাকে।
অর্থাৎ, ৩৩৩ = ৩X১০০ + ৩x১০ + ৩
দেশীয় সংখ্যাপঠন পদ্ধতি
দেশীয় রীতিতে সংখ্যার ডানদিক থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান যথাক্রমে একক, দশক ও শতক প্রকাশ করে। চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম স্থানকে যথাক্রমে হাজার, অযুত, লক্ষ, নিযুত, কোটি বলা হয়।
লক্ষ
হাজার
শতক
দশক
একক
কোটি
নিযুত
লক্ষ
অযুত
হাজার
অষ্টম
সপ্তম
ষষ্ঠ
পঞ্চম
চতুর্থ
তৃতীয়
দ্বিতীয়
প্রথম
এককের ঘরের অঙ্কগুলাে কথায় লেখা বা পড়া হয় এক, দুই, তিন, চার ইত্যাদি। কিছু দুই অঙ্কের সংখ্যাগুলাের বিশেষ বিশেষ নাম রয়েছে। যেমন, ২৫, ৩৮, ৭১ পড়া হয় যথাক্রমে। পঁচিশ, আটত্রিশ, একাত্তর।
শতকের ঘরের ১, ২, ৩ ইত্যাদি অঙ্কগুলােকে যথাক্রমে একশ, দুইশ, তিনশ ইত্যাদি পড়া হয়।
হাজারের ঘরের অঙ্কগুলােকে শতকের ঘরের মতাে পড়তে হয়। যেমন, পাঁচ হাজার, সাত হাজার ইত্যাদি।
অযুতের ঘরের অঙ্ককে অযুত হিসেবে পড়া হয় না। অযুত ও হাজারের ঘর মিলিয়ে যত হাজার হয় তত হাজার পড়া হয়। যেমন, অযুতের ঘরে ৭ এবং হাজারের ঘরে ৫ থাকলে দুই ঘরের অঙ্ক মিলিয়ে পঁচাত্তর হাজার পড়তে হয়।
নিযুত ও লক্ষের ঘর মিলিয়ে যত লক্ষ হয় তত লক্ষ হিসেবে পড়া হয়। যেমন, নিযুতের ঘরে ৮ এবং লক্ষের ঘরে ৩ থাকলে দুই ঘরের অঙ্ক মিলিয়ে তিরাশি লক্ষ পড়া হয়। কোটির ঘরের অঙ্ককে কোটি বলে পড়া হয়। কোটির ঘরের বামদিকের সব ঘরের অঙ্কগুলােকে কোটির ঘরের সাথে মিলিয়ে যত কোটি হয় তত কোটি পড়া হয়। চার বা ততােধিক অঙ্কে লিখিত সংখ্যা সহজে ও শুদ্ধভাবে পড়ার জন্য কমা (,) ব্যবহার করা যায়। এ ক্ষেত্রে, যেকোনাে সংখ্যার ডানদিক থেকে তিন অঙ্ক পরে একটি কমা এবং এরপর দুই অঙ্ক পর পর কমা ব্যবহার করা যায়।
উদাহরণ ১। কমা বসিয়ে কথায় লেখ : ৯৮৭৫৪৭৩২১।
সমাধান : সংখ্যাটির ডান দিক থেকে তিন ঘর পরে কমা (,) ; এরপর দুই ঘর পর পর কমা (,) বসালে আমরা পাই, ৯৮, ৭৫, ৪৭, ৩২১। এখন কোটির ঘরের দুইটি অঙ্ক মিলিয়ে ৯৮, নিযুত ও লক্ষের ঘরের দুইটি অঙ্ক মিলিয়ে ৭৫, অযুত ও হাজারের ঘরের দুইটি অঙ্ক মিলিয়ে ৪৭, শতকের ঘরে ৩, দশকের ঘরে ২ এবং এককের ঘরে ১ অবস্থিত । সুতরাং সংখ্যাটিকে কথায় প্রকাশ করলে হয় : আটানব্বই কোটি পঁচাত্তর লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার তিনশ একুশ।
উদাহরণ ২। অঙ্কে লেখ : সাত কোটি পাঁচ লক্ষ নব্বই হাজার সাত ।
সমাধান :
কোটি
নিযুত
লক্ষ
অযুত
হাজার
শতক
দশক
একক
৭
০
৫
৯
০
০
০
৭
কথায় প্রকাশিত সংখ্যাটি অঙ্কপাতনের পর দেখা যায় যে, নিযুত, শতক এবং দশকের ঘরে কোনাে অঙ্ক নাই। এ খালি ঘরগুলােতে ০ বসিয়ে সংখ্যাটি পাওয়া যায়। .:. সংখ্যাটি ৭, ০৫, ৯০, ০০৭।
উদাহরণ ৩। সাত অঙ্কের বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম সংখ্যা লেখ।
সমাধান : এক অঙ্কের বৃহত্তম সংখ্যা ৯। অঙ্কপাতনের যেকোনাে অবস্থানে ৯ এর স্থানীয় মান বৃহত্তম হবে। সুতরাং, সাতটি ৯ পর পর লিখলেই সাত অঙ্কের বৃহত্তম সংখ্যা পাওয়া যায়।
নির্ণেয় বৃহত্তম সংখ্যা : ৯৯, ৯৯, ৯৯৯ আবার, ক্ষুদ্রতম অঙ্ক হল ০। পর পর সাতটি শূন্য লিখলে সংখ্যাটি শূন্যই থাকে। সুতরাং, সর্ববামে
সার্থক ক্ষুদ্রতম অঙ্ক ১ লিখে ডানে পর পর ছয়টি ০ বসালে ক্ষুদ্রতম সংখ্যা পাওয়া যাবে। নির্ণেয় ক্ষুদ্রতম সংখ্যা ১০, ০০,০০০
উদাহরণ ৪। একই অঙ্ক মাত্র একবার ব্যবহার করে ৮, ০, ৭, ৫, ৩, ৪ অঙ্কগুলাে দ্বারা ছয় অঙ্কের বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম সংখ্যা গঠন কর।
সমাধান : অঙ্কপাতনে যেকোনাে অবস্থানে বৃহত্তর অঙ্কের স্থানীয় মান ক্ষুদ্রতর অঙ্কের স্থানীয় মান অপেক্ষা বড় হবে।
এখানে, ৮ > ৭ > ৫ > ৪ > ৩ > ০
সুতরাং, বড় থেকে ছােট ক্রমে অঙ্কপাতন করলেই বৃহত্তম সংখ্যাটি পাওয়া যাবে।
.: বৃহত্তম সংখ্যা ৮, ৭৫, ৪৩০। আবার, ০<3 <৪ < ৫ < ৭ < ৮ সংখ্যাটি ছােট থেকে বড় ক্রমে অঙ্কপাতন করলেই ক্ষুদ্রতম সংখ্যাটি পাওয়া যাবে। কিন্তু সর্ববামে ০ বসালে প্রাপ্ত সংখ্যাটি অর্থবােধক ছয় অঙ্কের সংখ্যা না হয়ে সংখ্যাটি পাঁচ অঙ্কের হবে। অতএব, ০ বাদে ক্ষুদ্রতম অঙ্কটি সর্ববামে লিখে শূন্যসহ অন্যান্য অঙ্কগুলাে ছােট থেকে বড় ক্রমে লিখলে ক্ষুদ্রতম সংখ্যাটি পাওয়া যায়।
.: ক্ষুদ্রতম সংখ্যা ৩,০৪,৫৭৮।
আন্তর্জাতিক গণনা পদ্ধতি
এ পদ্ধতিতে একক থেকে বিলিয়ন পর্যন্ত স্থানগুলাে নিচের নিয়মে পর পর এভাবে সাজানাে হয় :
বিলিয়ন
মিলিয়ন
হাজার
শতক
দশক
একক
১১১
১১১
১১১
১
১
১
একক, দশক ও শতকের ঘরের অঙ্কগুলাে আমাদের দেশীয় রীতিতেই পড়া ও কথায় প্রকাশ করা হয়।
শতকের ঘরের বামদিকের ঘরটি হাজারের ।
হাজারের ঘরে অনূর্ধ্ব ৩ অঙ্কবিশিষ্ট সংখ্যা লেখা যায় এবং যে সংখ্যা লেখা হয় তত হাজার পড়া হয়। যেমন, উপরে প্রদত্ত ছকে হাজারের ঘরে লিখিত সংখ্যাটি একশ এগারাে এবং পড়তে হয়, একশ এগারাে হাজার।
হাজারের ঘরের বামদিকের ঘর মিলিয়নের এবং এ ঘরে অনূর্ধ্ব তিন অঙ্কবিশিষ্ট সংখ্যা লেখা যায়। যে সংখ্যা লেখা হয় তত মিলিয়ন পড়া হয়। যেমন, ছকে লিখিত সংখ্যা হলাে : একশ এগারাে এবং পড়তে হয়, একশ এগারাে মিলিয়ন।
মিলিয়নের ঘরের বামের ঘর বিলিয়নের । যে সংখ্যা লেখা হয় তত বিলিয়ন পড়া হয়। যেমন, ছকে লিখিত সংখ্যা হল একশ এগারাে এবং পড়তে হয়, একশ এগারাে বিলিয়ন। কোনাে সংখ্যা শুদ্ধভাবে ও সহজে পড়ার জন্য যে রীতিতে ডানদিক থেকে তিন অঙ্ক পর পর কমা (,) বসানাে হয়, তা আন্তর্জাতিক গণনা পদ্ধতি।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণনা রীতির পারস্পরিক সম্পর্ক
কোটি
নিযুত
লক্ষ
অযুত
হাজার
শতক
দশক
একক
বিলিয়ন
মিলিয়ন
হাজার
১১১
১১১
১১১
১
১
১
লক্ষ করি : * মিলিয়নের ঘরে সর্বডানের ১ এর স্থানীয় মান ১ মিলিয়ন। দেশীয় রীতিতে এ ঘরটি হলাে নিযুতের ঘর। অর্থাৎ, এ ঘরে ১ এর স্থানীয় মান ১ নিযুত বা ১০ লক্ষ। * বিলিয়নের ঘরের সর্বর্ডানের ১ এর স্থানীয় মান ১ বিলিয়ন। কিন্তু দেশীয় রীতিতে এ
ঘরের ১ এর স্থানীয় মান ১০০ কোটি।
সুতরাং আমরা পাই,
১ মিলিয়ন = ১০ লক্ষ
১ বিলিয়ন = ১০০ কোটি
উদাহরণ ৫। আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে কথায় লেখ : ২০৪৩৪০৪৩২০০৪। সমাধান : ডানদিক থেকে তিন অঙ্ক পর পর কমা বসিয়ে আমরা পাই, ২০৪,৩৪০,৪৩২,০০৪। সুতরাং সংখ্যাটিকে কথায় প্রকাশ করলে হয় : দুইশ চার বিলিয়ন তিনশ চল্লিশ মিলিয়ন চারশ বত্রিশ হাজার চার ।
উদাহরণ ৬।
(ক) ৫ মিলিয়নে কত লক্ষ ?
(খ) ৫০০ কোটিতে কত বিলিয়ন ?
সমাধান :
(ক) ১ মিলিয়ন = ১০ লক্ষ
: ৫ মিলিয়ন = (৫ x ১০) লক্ষ = ৫০ লক্ষ ।
(খ) ১০০ কোটি = ১ বিলিয়ন
.: ১ কোটি = (১ : ১০০) বিলিয়ন .:
৫০০ কোটি = (৫০০ : ১০০) বিলিয়ন = ৫ বিলিয়ন ।
নিজে চেষ্টা করুনঃ
১। নিচের সংখ্যাগুলাে অঙ্কে লেখ :
(ক) বিশ হাজার সত্তর, ত্রিশ হাজার আট, পঞ্চান্ন হাজার চারশ।
(খ) চার লক্ষ পাঁচ হাজার, সাত লক্ষ দুই হাজার পঁচাত্তর।
(গ) ছিয়াত্তর লক্ষ নয় হাজার সত্তর, ত্রিশ লক্ষ নয়শ চার।
(ঘ) পাঁচ কোটি তিন লক্ষ দুই হাজার সাত।
(ঙ) আটানব্বই কোটি সাত লক্ষ পাঁচ হাজার নয়।
(চ) একশ দুই কোটি পাঁচ হাজার সাতশ আট ।
(ছ) নয়শ পঞ্চান্ন কোটি সাত লক্ষ নব্বই।
(জ) তিন হাজার পাঁচশ কোটি পঁচাশি লক্ষ নয়শ একুশ।
(ঝ) পঞ্চাশ বিলিয়ন তিনশ এক মিলিয়ন পাঁচশ আটত্রিশ হাজার।