সিন্ধু নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল বলে এটি ‘সিন্ধু সভ্যতা’ নামে পরিচিত। প্রায় ৩৫০০ বছর পূর্বে দ্রাবিড় জাতি এ নগর সভ্যতা গড়ে তুলেছিল বলে মনে করা হয়। পূর্ণবর্ধিত হরপ্পা (সময়কাল: ২৬০০-১৯০০ খ্রিস্টপূর্ব) ছিল একটি ব্রোঞ্জ যুগীর সভ্যতা। হরপ্পা সভ্যতার শ্রেষ্ট দুটি শহর ছিল হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো। হরপ্পা নগরীটি গড়ে উঠেছিল সিন্ধুর উপনদী রাভী’র তীরে। এটি অধুনা পাকিস্তান রাষ্ট্রের পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত। আর সিন্ধুনদের তীরে গড়ে উঠেছিল মহেঞ্জোদারো (অর্থ-মৃতের ঢিবি) নগরী। এই প্রাচীন সভ্যতা প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাব প্রদেশের হরপ্পায়। ১৯২২ সালে রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের লানকানা জেলায় মহেঞ্জোদারো নগরীর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। অপ্রত্যাশিতভাবে বেরিয়ে আসে তাম্রযুগের নিদর্শন।
সিন্ধু সভ্যতায় এক অভিজাত ও নগরাঞ্চলীয় সংস্কৃতির প্রমাণ পাওয়া যায়। দুটি শহরেই পাকা নর্দমা ছিল। শহরে রাস্তার দুপাশে দোতলা তিনতলা বাড়ি ছিল। প্রতি বাড়িতে ছিল চৌবাচ্চাসহ গোসলখানা, কূপ। মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পায় হাড় ও পাথরের তৈরি সীলমোহর পাওয়া গেছে। সিন্ধু সভ্যতায় পাওয়া সীল ও মাটির পাত্রের সাথে মেসোপটেমিয়ার দ্রব্যের মিল আছে। সিন্ধু সভ্যতার বেশিরভাগ লোক কৃষিকাজ করত। এই সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল পরিমাপ পদ্ধতি উদত্ভাবন করা। দ্রব্য ওজনের জন্য নগরবাসী বিভিন্ন পরিমাপের বাটখারা ব্যবহার করক। দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য তারা বিভিন্ন স্কেল ব্যবহার করত। সিন্ধু সভ্যতার পতন শুরু হয় আনুমানিক ১৫০০ খিস্টপূর্বাব্দে। কিভাবে সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংস হয় সে বিষয়ে পন্ডিতগণ সঠিক কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। হয়তো বাহিরের কোন শত্রুর আক্রমণ অথবা প্রচন্ড কোন ভূমিকম্প বা ভয়াবহ কোন বন্যার ফলে এ সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়।