এশিয়ারমানুষ ও প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার জন্য ১৭৮৪সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি স্যার উইলিয়াম জোনস দি এশিয়াটিক সোসাইটি নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সার্বিকভাবে এশিয়া এবং বিশেষভাবে দক্ষিণ এশিয়ার ওপর পদ্ধতিগত গবেষণা পরিচালনার জন্য একটি সমিতি প্রতিষ্ঠার ধারণা দেন এবং প্রাচ্যবিদ্যা অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে একটি নিয়মিত সংস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য জোনসের প্রস্তাব ফোর্ট উইলিয়ামের অন্যান্য সহকর্মীর কাছ থেকে জোরালো সমর্থন লাভ করে। ১৭৮৪ সালের ১৫ জানুয়ারি সমমনা ৩০ জন ইউরোপীয় ব্যক্তিত্ব কলকাতা সুপ্রিম কোর্টের গ্র্যান্ড জুরি কক্ষে এক বৈঠকে মিলিত হন এবং এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জোনসের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয় দি এশিয়াটিক সোসাইটি এবং উইলিয়াম জোনস এর প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৮২৯ সালে রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটি অব গ্রেট ব্রিটেন প্রতিষ্ঠিত হয়। 'বোম্বে রয়াল এশিয়াটিক সোসাইটি' নামে বোম্বেতে এর একটি শাখা ছিল। শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, টোকিও, আমেরিকা (ভিন্ন নামে ওরিয়েন্টাল একাডেমি) এবং পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় (১৯৫২সালে)। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এর পুনঃনামকরণ করা হয় বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি।
বাংলাদেশ শিল্প কলা একাডেমি
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি সাংস্কৃতিক মন্ত্রনালয়ের অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করে। ঢাকার সেগুনবাগিচায় এর কার্যালয় অবস্থিত।
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশের একটি সামাজিক সংগঠন যার মূল লক্ষ্য কিশোর ও যুব সমাজকে আলোকিত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা। এই সংগঠনের মূল কৌশল হলো গ্রন্থপাঠের মাধ্যমে তরুণদের সঠিক পথে পরিচালিত করা। আলোকিত মানুষ চাই - এই শ্লোগানের উপর ভিত্তি করে সংগঠনটি বাংলাদেশে বই পড়া ও সৎ চিন্তা বিকাশ ঘটানোর জন্য কাজ করে থাকে। এর মূল কার্যালয় ঢাকার বাংলামটর এলাকায় অবস্থিত। তবে দেশব্যাপী শাখা রয়েছে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর উদ্যোগে ১৯৭৮ সনে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। "মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়" এই স্বপ্ন নিয়েই বর্তমানে সারা দেশের প্রায় ১৭ লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী বই পড়া কর্মসূচির সাথে জড়িত। এছাড়াও জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার আনন্দময় চর্চা ও উৎকর্ষের ভিতর দিয়ে উদার দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলার জন্য ২০১৩ সাল থেকে চালু হয়েছে আলোর ইশকুল ও অনলাইনে বইপড়া কর্মসূচি আলোর পাঠশালা। কেন্দ্রে রয়েছে সুবিশাল গ্রন্থাগার, চিত্রকলা প্রদর্শনী কক্ষ, চলচ্চিত্র প্রদর্শনের কক্ষ, গান ও সঙ্গীতের আর্কাইভ সহ আরও অনেক কিছু। ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার প্রকল্পের অধীনে সংগঠনটি বাসে করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন বই প্রেরণের কাজও করে থাকে। সারাদেশব্যপী এ লাইব্রেরীর প্রায় ৫৬টি ভ্রাম্যমাণ গাড়িআছে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ রেমন মেগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন তার এই অসাধারণ সংগঠনটির জন্য।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট
১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হলে বাংলাদেশ সরকার একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ২০০০খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝিতে ১৯,৪৯,০০,০০০ টাকার "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প" সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ২০০১ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতিসংঘেরমহাসচিবকফি আনানের উপস্থিতিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শুরুতে ১২ তলা ভবনের উল্লেখ থাকলেও প্রাথমিকভাবে ৫ তলা নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়; তাতে একটি মিলনায়তন, চারটি সম্মেলন কক্ষ, কম্পিউটার ল্যাব, জাদুঘর, আর্কাইভ, ভাষা প্রশিক্ষণের জন্য ১০টি শ্রেণীকক্ষসহ প্রয়োজনীয় অফিসকক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়। এরপর সরকার বদলের পরে ভবনের নির্মাণ কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে সরকার প্রকল্প সংশোধন করে নির্মাণকাজ শেষ করার উদ্যোগ নেয়। সংশোধিত প্রকল্পের অধীনে ৩ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ শেষ হয় ২০১০ খ্রিস্টাব্দে। সেবছর ২১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনটির উদ্বোধন করেন। ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের ৯ বছর পর ভবনটি উদ্বোধন করা হয়।