লোক সাহিত্য" বলতে জনসাধারনের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথাকাহিনী, ছড়া, প্রবাদ ইত্যাদিকে বুঝানো হয়। সাধারণত কোনো সম্প্রদায় বা জনগোষ্ঠীর অলিখিত সাহিত্যই লোকসাহিত্য । “ডাক
ও খনার বচন' কে লোকসহিত্যের আদি নিদর্শন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ড. দীনেশচন্দ্র সেন
'লোকসাহিত্য” সংগ্রহে অবদান শুরুতৃপূর্ণ রেখেছেন।
লোক সাহিত্য ঃ ছড়া, লোকগীতি, গীতিকা, কথা (রূপকথা, উপকথা, ব্রতকথা) ধাঁধা, প্রবাদ ।
ছড়া : লোকসাহিত্যের প্রাচীনতম সৃষ্টি ছড়া। ধাঁধা: ধাঁধার বক্তব্য সাধারণত সঙ্গতিপূর্ণ থাকে না। যেমন- 'বন থেকে বেরুল টিয়ে সোনার টোপর
মাথায় দিয়ে' এর উত্তর হবে- আনারস । লোকগীতি : লোকসমাজের সুখে ঘুখে যে গীত চলে এসেছে । এতে কোন কাহিনী থাকে না | বিশেষ
বিশেষ ভাব অবলম্বনে এই শ্রেণির গান রচিত । হারামণি : প্রাচীন বিখ্যাত লোকগাতি সংকলন “হারামণি" | মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন ছিলেন এর প্রধান
সম্পাদক ।
গীতিকা (Ballad)
গীতিকা এক শ্রেণির আখ্যানমূলক লোকগীতি; -যা সাহিত্যে গীতিকা নামে পরিচিত। ইংরেজিতে
তাকে বলা হয়Ballad। Ballad শব্দটি ফরাসি Ballet বা নৃত্য শব্দ থেকে এসেছে। ইউরোপে
প্রাচীনকালে নাচের সাথে যে কবিতা গীত হত তাকেই Ballad বা গীতিকা বলা হত |
বাংলাদেশ থেকে সংগৃহীত লোকগীতিগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- ক) নাথ গীতিকা
১৮৭৮ সালে ভাষাবিজ্ঞানী স্যার জর্জ গ্রিয়ারসন রংপুর জেলার মুসলমান কৃষকদের কাছ হতে “ময়নামতী
গোপীচন্দ্রের পুঁথি' সংগ্রহ করে 'মাণিকচন্ত্র রাজার গান' নামে প্রকাশ করেন। ১৯২২ সালে কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'গোপীচন্দ্রের গান' প্রথম খন্ড এবং ১৯২৪ সালে দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়। প্রধম খণ্ডের গাথা লোকসাহিত্যের অন্তর্ভূক্ত; দ্বিতীয় খণ্ডের আখ্যান দু'জন কবির রচনা । একজন
ভবানীদাস ও অন্যজন শুকুর মহম্মদ। ড. নলিনীকান্ত ভট্রশালী ঢাকা থেকে ভবানীদাসের 'ময়নামতীর
গান এবং শুকুর মহম্মদের 'গোপীচাঁদের সন্যাস' সম্পাদনা করেন। মধ্যযুগের কবি শুকুর মহম্মদ
রাজশাহী জেলার সিঁন্দুর কুসুম গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। তীর বিখ্যাত কাব্যের নাম 'গোপীচাঁদের সন্ন্যাস "।
খ) মৈমনসিংহ গীতিকা
মৈমনসিংহ গীতিকাবৃহত্তর ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বাংশে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ জেলার
হাওর, বিল, নদ-নদী প্লাবিত ভাটি অঞ্চলে যে গীতিকা বিকশিত হয়েছিল তা
“মৈমনসিংহ গীতিকা” নামে পরিচিত । ড. দীনেশচন্দ্র সেন গীতিকাগুলো
* সংগ্রহ করে “মৈমনসিংহ গীতিকা' নামে প্রকাশ করেন। “মৈমনসিংহ
গীতিকা' বিশ্বের ২৩টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে।
মৈমনসিংহ গীতিকার উল্লেখযোগ্য গীতিকাগুলো হলো-
মহুয়া
মৈমনসিংহ গীতিকার শ্রেষ্ঠ পালা । দ্বিজ কানাই প্রণীত একটি প্রণয় আখ্যান। প্রধান চরিত্র- মহুয়া, নদের চাঁদ।
দেওয়ানা মদিনা
মনসুর বয়াতি প্রণীত ।
জয়চন্দ্র চন্দ্রবতী
নয়ান চাঁদ ঘোষ প্রণীত।
কাজল রেখা
--
গ) পূর্ববঙ্গ গীতিকা নামে পরিচিত গীতিকাগুলো কিছু পূর্ব ময়মনসিংহ থেকে এবং অবশিষ্ট গীতিকা
নোয়াখালী, চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে সংগৃহীত । ড. দীনেশচন্দ্র সেন গীতিকাগুলো সংগ্রহ করে 'পূর্ববঙ্গ
গীতিকা' নামে প্রকাশ করেন । উল্লেখযোগ্য গীতিকার মধ্যে রয়েছে- নিজাম ডাকাতের পালা, কাফন চোরা, কমল সদাগর প্রভৃতি ।
প্রবাদ : প্রবাদ লোকসাহিত্যের একটি অন্যতম অংশ । প্রাচীন কালে মানুষের মুখে মুখে এসব প্রবাদ
প্রচলিত ছিল৷ যেমন- “যদি থাকে বন্ধুর মন গাঙ পারাইতে কতক্ষণ” ।