প্রাচীনকালের অধিকাংশ সভ্যতা নদীমাতৃক হলেও রোমান সভ্যতা নদীমাতৃক ছিল না। ইতালির পশ্চিমাংশে অবস্থিত ছোট্ট শহর রোমকে কেন্দ্র করে রোমান সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর একদল মানুষ ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে উত্তর ইতালিতে বসতি গড়ে তোলে। এদের বলা হত ল্যাটিন। ক্রমে এদের ভাষা ‘ল্যাটিন ভাষা’ নামে পরিচিত পায়। ল্যাটিন রাজা রোমিউলাস একটি নগরীর পত্তন করেন। রাজার নামেই নগরীর নাম হয় রোম। দাসশ্রমের উপর নির্ভরশীল ছিল রোমের অর্থনীতি। দাসদের উপর অমানবিক অত্যাচার করা হত। অবশেষে স্পার্টাকাস নামক একজন দাসের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় দাস বিদ্রোহ। বিদ্রোহী দাসরা দুই বছর দক্ষিণ ইতালিতে টিকে ছিল। স্পার্টাকাস ৭১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে নিহত হলে দাস বিদ্রোহের অবসান হয়। রোমের সবচেয়ে খ্যাতিমান সম্রাট ছিলেন জুলিয়াস সিজার। তিনি ৪৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমের সম্রাট হন। তাঁর বিখ্যাত উক্তি ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’। কিন্তু রোমে ক্ষমতার দ্বন্ধ ও ষড়যন্ত্র প্রবল হতে থাকলে ব্রটাস ও ক্যাসিয়াস নামের দুই অভিজাতের হাতে জুলিয়াস সিজার নিহত হন। এবার গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে রোম। অবশেষে তিন নেতা একযোগে ক্ষমতায় আসেন। এরা হলেন অক্টোভিয়াস সিজার, মার্ক এন্টনি এবং লেপিডাস। এ তিনজনের একত্র শাসনকে ইতিহাসে ‘ত্রয়ী শাসন’ বলা হয়। ত্রয়ী শাসন বেশিদিন টেকেনি। অক্টোভিয়াস সিজার প্রথমে পরাজিত করেন লেপিডাসকে। এন্টনি মিশরের রাজকন্যা ক্লিওপেট্রা-কে বিয়ে করে শক্তি সঞ্চয় করেছিলেন। ক্লিওপেট্রাকে ইতিহাসে Serpent of the Nile (নীল নদের সর্প) নামে পরিচিত। কিন্তু তিনিও পরাজিত হন অক্টোভিয়াস সিজারের হাতে।
এভাবে রোমান সম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে অক্টোভিয়াস সিজার অগাস্টাস সিজার উপাধি গ্রহণ করেন। অগাস্টাস সিজারের রাজত্বকালে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যীশুখ্রিস্টের জন্ম। অগাস্টাস সিজার ১৪ সালে মারা যান। ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাজ্যের পতন হয়। শেষ রোমান সম্রাট ছিলেন রোমিউলাস অগাস্টুলাস।
দর্শন
রোমের সবচেয়ে জনপ্রিয় দার্শনিক মতবাদের নাম ‘স্টোয়িকবাদ’। এ দর্শনের উন্নয়নের পিছনে তিন ব্যক্তির বিশেষ ভূমিকা ছিল। এরা ছিলেন ধনী রোমান ‘সেনেকা’, অন্যজন এক দাস ‘এপিকটেটাস’ এবং শেষ ব্যক্তিত্ব হলেন রোমান সম্রাট ‘মার্কাস অরেলিয়াস’।
সাহিত্য
এ যুগের কবি হোরাস ও ভার্জিল যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ভার্জিলের মহাকাব্য ‘ইনিড’ বহুভাষায় অনূদিত হয়েছে। ওভিদ ও লিভি অন্য দুই খ্যাতিমান কবি। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ট্যাসিটাস এ যুগে রোমে জন্ম নিয়েছিলেন।
স্থাপত্য ও ভাস্কর্য
রোমের একটি বিখ্যাত স্থাপত্য নিদর্শন হচ্ছে সম্রাট হার্ডিয়ানের তৈরি ধর্মমন্দির প্যানথিয়ন (Pantheon)। প্যানথিয়ন মন্দিরের গম্বুজ আজ থেকে দুই হাজার বছর পূর্বে নির্মাণ করা হলেও এটি বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তম বৃষ্টিরোধক কংক্রিটের গম্বুজ হিসেবে আজও টিকে আছে। কলোসিয়াম নামে রোমে তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় নাট্যশালা তৈরি হয়েছিল। এখানে একসাথে ৫৬০০ দর্শক বসতে পারত।
আইন
রোমানদের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব আইনের ক্ষেত্রে। বার্জেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ রোমান আইন সংকলিত করেন। আইনের ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্ব সম্পূর্ণভাবে রোমান আইনের উপর নির্ভরশীল।