কুতুবউদ্দিন আইবেক মুহাম্মদ ঘুরীর একজন ক্রীতদাস হিসাবে জীবন শুরু করেন। তিনি মুহাম্মদ ঘুরীর অনুমতিক্রমে ভারত বিজয়ের পর দিল্লিতে মুসলিম শাসনের গোড়া পত্তন করেন। উপমহাদেশে স্থায়ী মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আইবেক। কুতুবউদ্দিন আইবেক ছিলেন তুর্কিস্থানের অধিবাসী। এজন্য কুতুবউদ্দিন আইবেক ও তার উত্তরাধিকারীদের শাসনামলকে প্রাথমিক যুগের তুর্কি শাসনও বলে চিহ্নিত করা হয়। দানশীলতার জন্য তাকে লাখবক্স বলা হত।দিল্লির কুতুবমিনার নামক সুউচ্চ মিনারটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় তার শাসনামলে। তিনি মিনারটির নির্মান কাজ শেষ করতে পারেনি। দিল্লির বিখ্যাত সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকির নামানুসারে এর নাম রাখা হয় কুতুবমিনার।
সুলতান শামসউদ্দিন ইলতুতমিশ(১২১১-১২৩৬ খ্রি.)
কুতুবউদ্দিন আইবেকের জামাতা ছিলেন ইলতুতমিশ। তিনি ছিলেন প্রাথমিক যুগের তুর্কি সুলতানদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তাকে দিল্লির সালতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। ভারতে মুসলমান শাসকদের মধ্যে তিনি প্রথম মুদ্রা প্রচলন করেন। তিনি কুতুবমিনারের নির্মাণকাজ সমাপ্ত করেন।
সুলতান রাজিয়া
ইলতুতমিশের কন্যা রাজিয়া ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ছিলেন দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণকারী প্রথম মুসলমান নারী।
সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদ
সুলতান নাসিরউদ্দিন অত্যন্ত ধর্মভীরু লোক ছিলেন। সরল ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনের জন্য তিনি ফকির বাদশাহ নামে পরিচিত। তিনি কুরআন নকল ও টুপি সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন
সুলতান গিয়াসউদ্দিন বিদ্যোৎসাহী ও গুণীজনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ভারতের তোতাপাখি নামে পরিচিত আমীর খসরু বলবনের দরবার অলংকৃত করেন।
খলজি বংশ
আলাউদ্দিন খলজি
পর্যটক ইবনে বতুতা আলাউদ্দিন খলজিকে দিল্লীর শ্রেষ্ঠ সুলতান বলে অভিহিত করেছেন। আলাউদ্দিন খলজি জনগনের সার্বিক কল্যাণের জন্য দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের উপর হস্তক্ষেপ করেন এবং প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য নির্দিষ্ট হারে বেধে দেন। তিনি শিল্পানুরাগী ছিলেন। বিখ্যাত আলাই দরওয়াজা তারই কীর্তি। ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারনী, কবি হোসেন দেহলবি, কবি আমির খসরু প্রমুখ গুণীজন তার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তিনি প্রথম মুসলমান শাসক হিসাবে দক্ষিন ভারত জয় করেন। তিনি ১৩০৬ খ্রিস্টাব্দে মালিক কাফুর নেতৃত্বে দক্ষিনাত্যের দেবগিরির রাজা রামচন্দ্রের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান প্রেরণ করেন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দেবগিরির রাজা দিল্লীর আনুগত্য স্বীকার করে।
তুঘলক বংশ
মুহাম্মদ বিন তুঘলক
মুহাম্মদ বিন তুঘলক অত্যন্ত প্রতিভাশালী শাসক ছিলেন। রাজ্য শাসনের প্রত্যক্ষ অসুবিধা দূর করার জন্য ১৩২৬-২৭ খ্রিস্টাব্দে সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় রাজধানী দিল্লী থেকে দেবগিরিতে স্থানান্তর করেন। কিন্ত নানা কারণে কর্মচারীদের দেবগিরি পছন্দ না হওয়ায় এবং উত্তর ভারতে মঙ্গলদের আক্রমন বেড়ে যাওয়ায় তিনি রাজধানী দিল্লীতে ফেরত আনেন। সুলতান সোনা ও রূপার মুদ্রা পরিবর্তন করে প্রতিক তামার মুদ্রা প্রচলন করে মুদ্রামান নির্ধারণ করে দেন। প্রতীক মুদ্রা জাল না হওয়ার জন্য যে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা সে যুগে ছিল না। ফলে ব্যপকভাবে মুদ্রা জাল হতে থাকে। এজন্য সুলতানকে এ পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হয়।
মাহমুদ শাহ
তুঘলক বংশের শেষ সুলতান ছিলেন মাহমুদ শাহ। বিখ্যাত তুর্কি বীর তৈমুর ছিলেন মধ্য এশিয়ার সমরকন্দের অধিপতি। শৈশবে তার একটি পা খোড়া হয়ে যায় বলে তিনি তৈমুর লঙ্গ নামে অভিহিত। মধ্য এশিয়ার বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপনের লক্ষ্যে ১৩৯৮ সালে তৈমুর ভারত আক্রমন করে। তৈমুরকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা মাহমুদ শাহের ছিলনা। তিনি বিনা বাধায় দিল্লিতে প্রবেশ করেন। প্রায় তিনমাস ধরে অবাধ হত্যা ও লুন্ঠনের পর তিনি বিপুল সম্পদ নিয়ে স্বদেশে ফিরে যান।
খান জাহান আলী
খান জাহান আলী ছিলেন একজন মুসলিম ধর্ম প্রচারক এবং বাংলাদেশের বাগেরহাটের একজন স্থানীয় শাসক। তিনি ১৩৬৯ খ্রিস্টাব্দে দিল্লীর এর সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। খান জাহান আলী ১৩৮৯ সালে তুঘলক সেনাবাহীনিতে সেনাপতির পদে যোগদান করেন। তিনি রাজা গনেশকে পরাজিত করে বাংলার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ইসলামের পতাকা উড্ডিন করেন। তিনি বাগেরহাট জেলায় বিখ্যাত ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মান করেন। পঞ্চদশ শতাব্দিতে এটি নির্মান করেন। মসজিদের নাম ষাট গম্বুজ হলেও মসজিদের গম্বুজ মোটেও ষাটটি নয়। গম্বুজ মোট ৮১ টি। মসজিদের ভিতরে ৬০ টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। মসজিদের চার কোনায় চারটি মিনার আছে। এটি বাংলাদেশের মধ্যযুগের সবচেয়ে বড় মসজিদ। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষনা করে।