পর্তুগিজ নাবিক বার্থোলোমিউ দিয়াজ ১৪৮৭ সালে আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে ইউরোপ হয়ে পূর্বদিকে আগমনের জলপথ আবিষ্কার করেন। সেই সূত্র ধরে ইউরোপ হতে ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কৃত হয় ১৪৯৮ সালে। পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো দা গামা এই জলপথ আবিষ্কার করেন। তিনি আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিম ও দক্ষিন উপকূল ঘুরে ইউরোপ থেকে ভারতের কালকট বন্দরে উপস্থিত হন।
পর্তুগিজদের আগমন
পর্তুগালের লোকদের পর্তুগুজ বলে। উপমহাদেশের ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে প্রথম বানিজ্য কুঠি স্থাপন করেন পর্তুগিজরা। ১৫১৪ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যার আন্তর্গত পিপলি নামক স্থানে সর্বপ্রথম বাণিজ্য কুঠু স্থাপন করে। ভারতের পর্তুগিজ উপনিবেশগুলোর প্রথম গভর্নর ছিলেন আলবুকার্ক। তিনি কোচিনে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। এই দুর্গটি ভারতে প্রথম ইউরোপীয় দুর্গ। বাংলায় ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে প্রথম এসেছিল পর্তুগিজরা ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দে। পর্তুগিজগণ বাংলাদেশে ফিরিঙ্গি নামে পরিচিত। ১৫১৭ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজরা চট্টগ্রামে আসতে শুরু করে। বানিজ্যের চেয়ে তাদের মধ্যে জলদস্যুতার বিষয়টি প্রবল ছিল। পর্তুগিজ জলদস্যুদের বলা হতো হার্মাদ। এ সময় শেরশাহকে প্রতিরোধ করার জন্য সুলতান মাহমুদ শাহ পর্তুগিজদের সাহায্যপ্রার্থী হন। সামরিক সহায়তার বিনিময়ে ১৫৩৭ সালে পর্তুগিজরা চট্টগ্রামে বানিজ্য কুঠি নির্মাণ করে। একই সঙ্গে তাদেরকে বন্দর এলাকায় শুল্ক আদায়ের অধিকার দেওয়া হয়। মাহমুদ শাহের পক্ষে পর্তুগিজরা শেরশাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ১৫৮১-১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম আরাকানদের অধীনে ছিল। এসময় পর্তুগিজ জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য খুব বৃদ্ধি পায়। ১৬৬৬ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেব এর নির্দেশে সুবেদার শায়েস্তা খান চট্টগ্রাম দখল করে পর্তুগিজদের চট্টগ্রাম থেকে বিতাড়িত করে।
ওলন্দাজদের আগমন
হল্যান্ডের অধিবাসীদের ডাচ বা ওলন্দাজ বলে। তারা পর্তুগিজদের দেখাদেখি এদেশে আসে এবং ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী গঠন করে। প্রথমে প্প্রতুগিজ এবং পরে ইংরেজরা ছিল তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী । ইংরেজদের সাথে প্রতিযোগীতায় না টিকে তারা এদেশ থেকে চলে যায় এবং ইন্দোনেশিয়া গিয়ে উপনিবেশ স্থাপন করে।
দিনেমারদের আগমন
ডেনমার্কের লোকদের বলা হয় ডেনিশ বা দজনেমার। তারা এদেশে বাণিজ্য করার জন্য ডেনিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী গঠন করে। কিন্তু তারা বানিজ্যে তেমন সুবিধা করতে পারেনি।
ইংরেজদের আগমন
ইংল্যান্ডের রানী প্রথম এলেজাবেথ দিল্লীর সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে প্রাচ্যের সাথে বাণিজ্য করার জন্য ২১৮ জন ইংরেজ বণিকদের প্রচেষ্টায় ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী গঠিত হয়। ক্যাপ্টেন হকিন্স ১৬০৮ সালে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের সুপারিশপত্র নিয়ে বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের উদ্দেশ্যে সম্রাট জাহাঙ্গিরের দরবারে আসেন। ক্যাপ্টেন হকেন্সের আবেদনক্রমে সম্রাট জাহাঙ্গির সুরাটে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণের অনুমতি দেন। ঐ সালেই অর্থ্যাৎ ১৬১২ সালে ইংরেজরা উপমহাদেশের প্রথম কুঠি স্থাপন করে। ১৬৩৩ সালে হরিহরপুরে তারা এ কুঠি স্থাপন করে। দীর্ঘকাল পরে ১৬৫১ সালে হুগলী শহরে তারা দ্বিতীয় লুঠি নির্মাণ করে। ঐ বছর বাংলার সুবেদার শাহজাদা সুজা ইংরেজদের এদেশে বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার দেন। সম্রাট আওরঙ্গ জেবের রাজত্ব কালে ১৬৯০ সালে কোম্পানীর এজেন্ট জব চার্নক সুতানটি গ্রামে একটি নগর প্রতিষ্ঠা করেন। পরে কলকাতা ও গোবিন্দপুরে গ্রাম কিনে নগরটিকে আরো বড় করা হয়। এভাবেই গড়ে ওঠে বিখ্যাত কলকাতা শহর। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকেন্দ্র ছিল কলকাতা। ১৬৯৮ সালে কলকাতায় ইংল্যান্ডের রাজা উইলিয়ামের নামানুসারে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মিত হয়। মুঘল সম্রাট ফখরুখশিয়ার ১৭১৭ সালে এক ফরমান জারি করে। এতে তিনি মাত্র তিন হাজার টাকার বিনিময়ে সমগ্র মুঘল সাম্রাজ্যে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার্প্রদান করেন।
ফরাসিদের আগমন
ইউরোপীয় জাতিগুলোর মধ্যে উপমহাদেশে সকলের শেষে ব্যবসা করার জন্য আসে ফরাসিগণ। তারা প্রায় ১০০ বছর এদেশে বাণিজ্য করে। তারা বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠে কিন্তু ১৭৬০ সালে বান্দীবাসের যুদ্ধে ইংরেজদের নিকট পরাজিত হলে তারা ভারত থেকে সরে পড়ে।