বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক ছিলেন গৌতম বুদ্ধ। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে বুদ্ধদেব হিমালয়ের পাদদেশে নেপালের লুম্বিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শুদ্ধোধন ও মায়ের নাম মায়াদেবী। পিতামাতা তাঁর নাম রাখেন গৌতম। বাল্যকালে তাঁর নাম ছিল সিদ্ধার্থ। শাক্যবংশে জন্ম বলে তাঁকে শাক্যসিংহও বলা হয়। তিনি ২৯ বছর বয়সে গ্রহত্যাগ করেন। গৃহত্যাগের পর গৌতম ছয় বছর নির্জনে ধ্যানমগ্ন থেকে কঠোর সাধনা করেন। অবশেষে নেরঞ্জনা নদীর তীরে এক অশ্বথ গাছের তলায় বসে তিনি ধ্যানমগ্ন হন এবং বোধি বা দিব্যজ্ঞান লাভ করেন। যে গাছের নিচে বসে তিনি ধ্যান করেছিলেন সে গাছটির নাম রাখা হয় ‘বোধিবৃক্ষ’। স্থানটির নাম রাখা হয় ‘বুদ্ধগয়া’। গৌতমবুদ্ধ ৮০ বছর বয়সে কুশীনগরে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন।
বৌদ্ধধর্মের মূলনীতি
বৌদ্ধ ধর্মে কোন জাকিভেদ নেই। এ ধমেৃর মূলকথা হচ্ছে অহিংসা পরম ধর্ম। বুদ্ধদেব এছাড়াও মানুষকে পঞ্চশীল পালনের উপদেশ দিয়ে গেছেন। পঞ্চ শব্দের অর্থ পাঁচ এবং শীল শব্দের অর্থ আচরণ। এ পঞ্চশীল হচ্ছে জবি হত্যা না করা , চুরি না করা, মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকা, মিথ্যা কামাচারে বশীভূত না হওয়া, মদ্যাসক্ত না হওয়া। গৌতম বুদ্ধের মতে, মানুষের দুঃখের কারণ হল ‘আসক্তি’ বা ‘তৃষ্ণা’। কোন কিছু পাওয়ার আশা করার নামই আসক্তি। আসক্তির অবসান হলে দুঃখ থেকে মুক্তি আসবে। দুঃখ থেকে মুক্তির নাম ‘নির্বাণ লাভ’। কারও কারও মতে, ‘নির্বাণ লাভ’ হলো কর্ম বা জন্মের অনন্ত ধারার পরিসমাপ্তি। নির্বাণ লাভের উপায় হল ‘মধ্যম পন্থা’বা মধ্যপথ অনুসরণ করা।
বুদ্ধের মতে এ মধ্যপথ হলো আটটি। এগুলো হচ্ছে- ১) সৎ সংকল্প ২) সৎ চিন্তা ৩) সৎ বাক্য ৪) সৎ ব্যবহার ৫) সৎ জীবনযাপন ৬) সৎ চেষ্টা ৭) সৎ দর্শন ৮) সম্যক সমাধি। পালি ভাষায় রচিত ত্রিপিটক বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। বুদ্ধগয়া ও সারনাথ তাদের পবিত্র তীর্থস্থান। বৌদ্ধদের উপসনালয়কে বলা হয় বৌদ্ধবিহার বা প্যাগোডা বা কিয়াং।
তক্ষশীলা (Taxila): পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে রাওয়ালপিন্ডি জেলায় অবস্থিত বৌদ্ধধর্মের স্মৃতিবিজড়িত প্রত্নতাত্তিক স্থান।
বোরোবিদুর বুদ্ধ মন্দির: ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পূণ্যতীর্থ হলো ‘বোরোবিদুর বুদ্ধ মন্দির’। জাকার্তার ৪৫ কিমি. উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত এটি গোলার্ধের সবচেয়ে বড় মনুষ্য নির্মিত ধর্মীয় কীর্তি। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাভাযাত্রীর ডায়েরি গ্রন্থে এ মন্দিরের নাম উল্লেখ রয়েছে।