বাক্যের অর্থ সুস্পষ্টভাবে বোঝানোর জন্য বাক্যের মধ্যে বা ব্যাক্যের সমাপ্তিতে কিংবা বাক্যে আবেগ ( হর্ষ, বিষাদ) জিজ্ঞাসা ইত্যাদি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে বাক্য-গঠনে যেভাবে বিরতি দিতে হয় এবং লেখার সময় বাক্যের মধ্যে তা দেখানোর জন্য যেসব সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয় , তাই যতি বা ছেদ বা বিরাম চিহ্ন। অর্থাৎ লেখার সময় বিশ্রামের জন্য আমরা যে চিহ্নগুলো ব্যবহার করে থাকি ,সেগুলোকে বিরাম চিহ্ন বলে। মনীর চৌধুরী এবং মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য বই অনুযায়ী বিরাম চিহ্ন মোট ১২ টি । কিন্তু অন্যান্য ব্যাকরণ বইয়ে ১১ টি বিরাম চিহ্ন পাওয়া যায় ।
বিরাম চিহ্ন ব্যবহৃত হয়-
বাক্যের অর্থ সহজভাবে বোঝাতে
শ্বাস বিরতির জায়গা দেখাতে
বাক্যের অর্থ স্পষ্টীকরণের জন্য
বক্তার মেজাজ স্পষ্ঠ করতে বিরাম চিহ্ন ব্যবহৃত হয় না ।
আমি বললাম ,"তুমি গৃহদাহ পড়িয়াছ কি ? " বাক্যটিতে চারটি বিরাম চিহ্নের ব্যবহার আছে।
বিরাম চিহ্নকে সাধারণত দু ভাগে ভাগ করা যায় -বাক্যান্তর্গত বিরাম চিহ্ন ঃ কমা, সেমিকোলন, ড্যাস ইত্যাদি ।
প্রান্তিক বিরাম চিহ্ন ঃ তিনটি বিরাম চিহ্ণ বাক্যের শেষে বসে। যথা- প্রশ্নচিহ্ন, (?), দাঁড়ি (।) , বিস্ময়চিহ্ন (!)
বিভিন্ন বিরাম চিহ্নের পরিয়
ব্যবহৃত নাম
বাংলা অর্থ
ইংরেজি নাম
আকার / চিহ্ন
বিরামের সময়
কমা
অয়াদচ্ছেদ
Comma
,
১ বলতে যে সময়
সেমিকোলন
অর্ধচ্ছেদ
semicolon
;
১ বলার দ্বিগুন সময়
দাঁড়ি
পূর্ণচ্ছেদ
Full Stop
।
১ সেকেন্ড
প্রশ্ন চিহ্ন
প্রশ্নবোধক চিহ্ন
Note of Interrogation
?
ঐ
বিস্ময় চিহ্ন
বিস্ময় সূচক চিহ্ন
Note of Exclamation
!
ঐ
কোলন
দৃষ্টান্তচ্ছেদ
Colon
ঃ
ঐ
কোলন-ড্যাস
ছেদ বাক্য সঙ্গতি চিহ্ন
Colon Dash
ঃ-
ঐ
ড্যাস
বাক্য সঙ্গতি
Dash
___
ঐ
হাইফেন
শব্দ সংযোগ চিহ্ন
Hypen
-
থামার প্রয়োজন নেই
জোড় উদ্ধৃতি চিহ্ন
জোড় উদ্ধৃতি চিহ্ন
Inverted commas
" "
১ বলতে যে সময়
এক উদ্ধৃতি চিহ্ন
এক উদ্ধতি চিহ্ন
Quotation Mark
' '
১ সেকেন্ড
লোপ চিহ্ন
ইলেক চিহ্ন
Apostrophe
'
থামার প্রয়োজন নেই
প্রথম বন্ধনী
প্রথম বন্ধনী চিহ্ন
First Brackets
( )
ঐ
তৃতীয় বন্ধনী
তৃতীয় বন্ধনী চিহ্ন
Third Brackets
[ ]
অই
বর্জন চিহ্ন
বর্জন চিহ্ন
Asterisk
../ ***
বিন্দু চিহ্ন
বিন্দু
Dot
.
বিক্লপ চিহ্ন
বিকল্প চিহ্ন
Slash
/
বিভিন্ন বিরাম চিহ্নের প্রয়োগ
কমা / পাদচ্ছেদ(,)
বাক্য পাঠাকালে সুস্পষ্ট বা অর্থ- বিভাগ দেখাবার জন্য যেখানে স্বল্প বিরতির প্রয়োজন, সেখানে কমা ব্যবহৃত হয়। যেমন- সুখ চাও, সুখ পাবে পরিশ্রমে |
সম্বোধনের পরে কমা বসাতে হয়। যেমন- শাওন, এদিকে এসো ।
পরস্পর সন্বন্ধযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ এক সঙ্গে বসলে শেষ পদটি ছাড়া বাকি সবগুলোর পরই কমা বসবে । যেমন- আরিফ, শাহীন ও শাওন তিন ভাই ।
জটিল বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেক খণ্তবাক্যের পরে কমা বসবে । যেমন- কাল যে লোকটি এসেছিল, সে আমার পূর্ব পরিচিত।
উদ্ধরণ চিহ্কের পূর্বে খেগুবাক্যের শেষে) কমা বসাতে হবে । যেমন- মাসুদ সাহেব বললেন, “ছুটি পাবে না।”
মাসের তারিখ লিখতে বার ও মাসের পর “কমা বসবে । যেমন- ১৫ পৌষ, সোমবার,
১৪১০ সাল ।
বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের পরে 'কমা' বসবে । যেমন- ৬৮, নবাবপুর রোড, ঢাকা-১০০০।
নামের পরে ডিঘিসচক পরিচয় সংযোজিত হলে সেগুলোর প্রত্যেকটির পরে “কমা” বসবে।
যেমন- মুহম্মদ আইনুর রহমান, এম.বি.এ, পি-এইচ.ডি।
সেমিকোলন (;) : সেমিকোলন বাক্যের মধ্যকার বিরতি ত-কাল নির্দেশ করে । কমা অপেক্ষা বেশি-বিরতির প্রয়োজন হলে. সেমিকোলন বসে । একাধিক স্বাধীন বাক্যকে একটি বাক্যে লিখলে সেগুলোর মাঝখানে সেমিকোলন বসে! হুটি বাক্যের মধ্যে অর্থের সম্বন্ধ থাকলে সেমিকোলন বসে। যথা- সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ আমরা; এ মায়ার বাধন কি সত্যিই দুশ্ছেদ্য?
দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।) : বাক্যের পরিসমাস্তি বোঝাতে দীড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহার করতে হয়। যেমন- শীতকালে এ শেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকে । কী বললে, আমি পাগল ।
প্রশ্ববোধক চিহ্ন (?) : বাক্যে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে। যেমন- তুমি এখন এলে? সে কি যাবে?
বিস্ময় ও সম্বোধন চিহ্ন (!) : হৃদয়াবেগ প্রকাশ করতে হলে এবং সম্বোধন পদের পরে (!) চিহ্নটি বসে। যেমন- আহা! কী চমৎকার দৃশ্য !কিন্তু আধুনিক নিয়মে সম্বোধন স্থলে কমা চিহ্নের ব্যবহার করা হয়।
কোলন (:): একটি অপূর্ণ বাক্যের পরে অন্য একটি বাক্যের অবতারণা করতে হলে কোলন ব্যবহত হয়। বাক্য অসম্পূর্ণ থাকলে বাক্যের শেষে কোলন চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। যেমন- সভায় সাব্যস্ত হল : একমাস পরে নতুন সভাপতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । .
ড্যাস চিহ্ন (--): যৌগিক ও মিশ্র বাক্য পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা তার বেশি বাক্যের সমন্বয় বা সংযোগ বোঝাতে ড্যাস ব্যবহ্নত হয়। বাক্যের কোন উক্তি অসমাপ্ত রাখার ইঙ্গিতে কিংবা বাক্যের কোনো অংশের কোনো বক্তব্য ব্যাখ্যা করে বোঝাতে যে বিরামচিহ ব্যবহার করা হয়, তা হলো ড্যাস টি কোনো কথার দৃষ্টান্ত বা বিস্তার বোঝাতে ড্যাস বসে । যেমন- তোমরা দরিদ্রের উপকার কর--এতে তোমাদের সম্মান যাবে না--বাডবে।
কোলন ড্যাস (:-) : উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত প্রয়োগ করতে হলে কোলন এবং ড্যাস চিহ্ন এক সঙ্গে ব্যবহত হয়। ষেমন- পদ পাঁচ প্রকার :- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় এবং ক্রিয়া ।
হইফেন বা সংযোগ চিহ্ন (-) : সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখাবার জন্য হাইফেনে ব্যবহার হয়। দুই শব্দের সংযোগ বোঝাতে হাইফেন ব্যবহৃত হয়। বাক্যে সমজাতীয় একাধিক পদের ব্যবহারে বা দুটি পদের সংযোগস্থলে হাইফেন বসে । তাই হাইফেনকে পদ সংযোগ চিহ্ন বলে । যেমন-
এ আমাদের শ্রদ্ধা-অভিনন্দন, আমাদের শ্রীতি-উপহার।
ইলেক/ লোপ চিহ্ন (') - কোনো বর্ণ বিশেষের লোপ বোঝাতে বিলুপ্ত বর্ণের জন্য (') লোপচিহ দেওয়া হয় । বর্জনস্থানে শব্দের উপরে লেখা কমাকে বলা হয় ইলেক চিহ্ন। যেমন- মাথার “পরে জুলছে রবি ('পরে = ওপরে), পাগড়ি বাধা যাচ্ছে কা'রা? (কা'রা = কাহারা)
উদ্ধরণ চিহ্ন ('' ") : বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিকে এই চিহ্নের অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। উদ্ধরণ চিহ্ন দুই প্রকার । যথা- এক উদ্ধতি , জোড় উদ্ধতি ৷ উদ্ধৃতি চিহ্ন সংলাপে বসে । যথা- শিক্ষক বললেন, “গতকাল তুরস্কে ভয়ানক ভূমিকম্প হয়েছে ।”
ব্যাকেট বা বন্ধনী চিহ্ন (),{}, [] : এই তিনটি চিহৃই গণিতশাস্ত্রে ব্যবহৃত হয় । তবে প্রথম বন্ধনীটি বিশেষ ব্যাখ্যা মূলক অর্থে সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে যেমন- তিনি ত্রিপুরায় (বর্তমানে কুমিল্লা)জম্নগ্রহণ করেন।
ব্যাকরণিক চিহ্ন
ধাতু বোঝাতে (C) চিহ্ন : Cস্থা =স্থা ধাতু।
পরবর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন বোঝাতে (< ) চিহ : জীাদরেল < জেনারেল ।
পূর্ববর্তী শব্দ থেকে উৎপন্ন বোঝাতে (>) চিহ্ন : গঙ্গা >গাঙ। .
সমানবাচক বোঝাতে সমান (=) চিহ্ন : নর ও নারী = নরনারী।