মনের ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম ভাষা । ভাষা হচ্ছে - ভাবের উচ্চারণ । নির্দিষ্ট পরিবেশে মানুষের বস্তু ও ভাবের প্রতীকই ভাষা। মানুষের মুখে উচ্চারিত অর্থবোধক ও ম্নোভাব প্রকাশক ধ্বনি সমষ্টিকে ভাষা বলে। ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্যগুলো - অর্থদ্যোতকতা, মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত ধ্বনি এবং জনসমাজে ব্যবহার যোগ্যতা। ব্যাকরণ ও ভাষার মধ্যে ভাষা আগে সৃষ্টি হয়েছে ।
বাংলা ভাষার রীতিভেদ
বাংলা ভাষা প্রধান বা মৌলিক রূপ দুইটি । যথা- লৈখিক রূপ এবং মৌখিক । লেখার রীতি ভাষার মৌলিক রীতি। বাংলা চাষার প্রকারভেদ বা রীতিভেদ নিচের চিত্রের মাধ্যমে দেখানো যায় - লৈখিক রূপ কে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে । ১) সাধু, ২ ) চলিত
মৌখিক রূপ কে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে । ১) চলিত ২) আঞ্চলিক ( উপভাষা )
ক) সাধু রীতি
সংস্কৃত -ব্যতপত্তি সম্পন্ন মানুষের ভাষাকে " সাধু ভাষা " বলএ প্রথম অভিহিত করেন রাজা রামমোহন রায় ।বাংলা গদ্যের প্রথম যুগে সাধু রীতির প্রচলন ছিল ।
খ) চরিত রীতি
সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা কে " চলিত ভাষা " বলা হয় । চলিত ভাষার আদর্শরুপে গৃহীত ভাষাকে বলা হয় প্রতিম ভাষা । চলিত ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য প্রমিত উচ্চারণ । কলকাতা অঞ্চলের মৌখিক ভাষাকে ভিত্তি করে চলিত ভাষা গড়ে উঠেছে । উনিশ শতকের তৃতীয় দশকে ভাবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যয়ের হাতে চলিত রীতির প্রথম ব্যবহার হয় । তারপর প্যারীচাঁদ মিত্র ও কালী প্রসন্ন সিংহের রচনায় এর ক্রমবিকাশ ঘটে । আলালের ভাষা ছিল মূলত সাধু ভাষার উপর প্রতিষ্ঠিত কেবল কিছু বর্ণ্না এবং কোনো কোনো সংলাপ চলিত রীতির ; অপরপক্ষে, হুতোম লেখা হয়েছিল পুরোপুরি চলিত রীতিতে । প্রম্থ চৌধুরীর "সবুজপত্র "কে কেন্দ্র করে ১৯১৪ সালের দিকে এ গদ্যরীতির সাহিত্যিক স্বীকৃতি ও পূর্ণ বিকাশ লাভ করে। প্রম্থ চৌধুরী "বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক " বলা হয় । তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাংলা গদ্যে চলিত রীতির ব্যাবহারে উদ্বুদ্ধ করেন ।
সাধু ও চলিত রীতি পার্থক্য
সাধু রীতি
চলিত রীতি
পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট
পরিবর্তনশীল ।
গুরুগম্ভীর ও আভিজাত্যের পরিচায়ক
সংক্ষিপ্ত , সহজবোধ্য ও কৃত্রিমতা বর্জিত ।
তৎসম শব্দ বহুল ।
তদ্ভব শব্দবহুল ।
শুধু লৈখিক রূপ আছে
লৈখিক ও মৌখিক উভয় রূপ আছে।
নাটকের সংলাপ , বক্তৃতা এবং আলাপ - আলোচনার অনুপযোগী ।
নাটকের সংলাপ, বক্তৃতা এবং আলাপ-আলোচনার উপযোগী ।
সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের বিশেষ গঠন পদ্ধতি মেনে চলে । ক্রিয়া, সর্বনাম ওয়নুসর্গের পূর্ণ্রুপ ব্যবহ্নত হয় ।
সর্ব ও ক্রিয়াপদ পরিবর্তিত ও সহজতর রূপ লাভ করে । ক্রিয়া ,সর্বনাম ও অনুসর্গের রূপ সংক্ষিপ্ত ।
সাধু ও চলিত রীতিতে বিভিন্ন পদের রুপভেদ
সাধু রীতি
চলিত রীতি
সাধু রীতি
চলিত রীতি
দেন নাই
দেন নি
তাঁহারা
তাঁরা
দেখিয়া
দেখে
উঁহারা
ওরা
ফুটিয়া রহিয়াছে
ফুটে রয়েছে
উহা
ওটা
খুলিয়া
খুলে
তাঁহার
তাঁর
ভাঙিয়া যাইতে লাগিল
চেঙে যেলে লাগল
তাহাকে
তাকে
পড়িয়াছেন
পড়েছেন
তিনি
সে
বলিয়া
বলে
ছুটিতে
ছুটতে
গৃহ
ঘর
পাইয়াছিলেন
পেয়েছিলেন
মস্তক
মাথা
পড়িল
পড়ল
জুতা
জুতো
পার হইয়া
পেরিয়ে
সুতা
সুতো
আসিয়া
এসে
তুলা
তুলো
হইলেন
হলেন
পূজা
পূজো
হইয়া
হয়ে
শুষ্ক
শুকনো
হইল
হল
জ্যোৎস্না
জোছনা
করিবার
করবার
করিয়া
করে
বন্য
বনো
করিল
করল
সতিশয়
অত্যন্ত
করিতেছি
করতেছি
কিয়তক্ষণ
কিছুক্ষণ
ফিরিয়া
ফিরে
রঙ্গিন
রাঙিন
আসিবে
আসবে
লাগিল
লাগলো
পূর্বেই
আগেই
চকিত হওয়া
চমকে
সহিত
সঙ্গে , সাথে
ছড়াইলে
ছড়ালে
অপেক্ষা
চেয়ে
জড়াইলে
জড়ালে
হইতে
হতে
লিকজা
লেখা
দিয়া
দিয়ে
হউক
হোক
জন্য
জন্যে
অদ্য
আজ
লম্ফ
লাফ
-গ্রহ " সাধুরীতির শব্দ ।
সাধু ভাষার শব্দে ঙ্গ" এর স্থলে চলিত ভাষায় "ঙ" এর কোমল রুপ ব্যবহ্নত হয় ।
সাধু ভাষা
চলিত ভাষা
অতএব, অতঃপর , অচিরাৎ, এবং বিধ, কদাপি , কদাচ, যদ্যপি,প্রায়শ, বরঞ্চ,নচেত, ইদানীং ,পরন্ত,যুগপত, সংস্কৃত থেকে আগত প্রভৃতি অব্যয় পদ সাধু ভাষায় ব্যবহৃত হয় ।
বাংলার নিজস্ব অব্যয় পদ যেমন- না,বা কি-বা,আচ্ছা,তবু,আর ,আরও তো,আবার,মতো,মতন,ছি,দুর,দুত্তোর প্রভৃতি চলিত ভাষায় ব্যবহৃত হয়।
তথাপি -তবু,প্রায়শ -প্রায়ই , বরঞ্চ-রবং , অতঃপর- তারপর; এরুপ কিছু অব্যয় সাধু ভাষা থেকে চলিত ভাষায় এসেছে ।
সাধু ও চলিত রীতির প্রয়োগ
সাধু রীতিঃ তখন গভীর ছায়া নামিয়া আসিল সবখানে ।
চলিত রীতিঃ তখন গভীর ছায়া নেমে আসল সবখানে।
সাধু রীতিঃ কোন ভাষা -রীতিতে এই প্রশ্ন লিখা হইয়াছে ?
চলিত রীতিঃ কোন ভাষা-রীতিতে এ প্রশ্ন লেখা হয়েছে ?
সাধু রীতিঃ অতঃপর তাহারা চলিয়া গেল ।
চলিত রীতিঃ তারপর তারা চলে গেল ।
সাধু রীতিঃ একদা মরণ - সমুদ্রের বেলা ভুমিতে দাঁড়াইয়া কোন এক আরবীয় সাধক বলিয়াছিলেন।
চলিত রীতিঃ একদিন মরণ -সমুদ্রের বেলা ভুমিতে দাঁড়িয়ে কোনো এক আরবীয় সাধক বলেছিলেন ।