সুবেদার মুর্শিদকুলী খানের সময় থেকে বাংলা সুবা প্রায় স্বাধীন হয়ে পড়ে। নবাব মুর্শিদকুলী খান বাংলার প্রথম স্বাধীন নবাব। নবাব মুর্শিদকুলী খান বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে স্থানাবতরিত করেন।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা
আলীর্বদী খানের কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। ছোট মেয়ে আমেনার বিবাহ হয় জয়েরউদ্দীনের সাথে। তাদের সন্তান সিরাজ উদ্দৌলাকে তিনি তার উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। সিরাজউদ্দৌলার প্রকৃত নাম মীর্জা মুহাম্মদ আলী। তিনি ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল সিরাজউদ্দৌলা বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করেন। এ সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। সিরাজ সিনহহাসন লাভ করায় তার বড় খালা ঘসেটি বেগম এবং দরবারের প্রভাবশালীগণ নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। ইংরেজগ্ণ এ ষড়যন্ত্রে যোগ দেয়।
ইংরেজদের বিরুদ্ধে অভিযান
১৭৫৬ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতায় ইংরেজদের ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ অধিকার করেন। কলকাতা অধিকার করে সিরাজউদ্দৌলা নিজ মাতামহের নামানুসারে এর নাম রাখেন আলীনগর।
অন্ধকূপ হত্যা কাহিনী
নবাবের কলকাতা অভিযান প্রাক্কালে হলওয়েলসহ কতিপয় ইংরেজ কর্মচারী ফোর্ট উইলিয়াম বন্দী হয়েছিলেন। তার মধ্যে ঐতিহাসিক হলওয়েলের বর্ণনা মতে জানা যায় যে, নবাব। ১৪৬ জন ইংরেজ বন্দী একটি ক্ষুদ্র অন্ধকার প্রকোষ্ঠ আবদ্ধ করে রাখেন। জুন মাসে প্রচন্ড গরমে ক্ষুদ্র পরিসরে ১৪৬ জন ইংরেজ বন্দীর মধ্যে ১২৩ জন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। হলওয়েল কতৃক প্রচারিত এই কাহিনী অন্ধকূপ হত্যা নামে পরিচিত। অন্ধকূপ কাহিনীর পশ্চাতে কোনো ঐতিহাসিক সত্যতা খুজে পাওয়া যায় না।
পলাশীর যুদ্ধ
২৩ জুন ১৭৫৭ পলাশীর প্রান্তরে নবাবের সাথে ইংরেজদের যুদ্ধ হয়। মীরমর্দন, মোহনলাল প্রমুখ দেশপ্রেমিক সৈনিকগন প্রানপণ যুদ্ধ করলেও নবাবের সেনাপতি মীর জাফর, জগৎ শেঠ, রায় দুর্লভ, ইয়ারলতিফ, উমিচাদের ন্যায় দেশদ্রোহীদের ষড়যন্ত্রে নবাব পরাজিত ও নিহত হন। এ যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। সিরাজউদ্দৌলার হত্যাকারী মোহাম্মদী বেগ।মতান্তরে মীর জাফরের পুত্র মিরন।
মীর কাসিম
মীর কাসিম ছিলেন মীর জাফরের জামাতা। তিনি ১৭৬০ সালে বাংলার সিংহাসনে আরোহণ করে। মীর কাসিম ছিলেন একজন সুযোগ্য শাসক ও একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক। তাই প্রশাসনকে ইংরেজ প্রভাবমুক্ত করার জন্য বিচক্ষণ মবাব সর্বাগ্রে রাজধানী মুর্শিদাবাদ থেকে মুঙ্গরে স্থানান্তরিত করেন।
বক্সারের যুদ্ধ
ইংরেজ বাহিনীর কাছে ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের প্রান্তরে মীর কাসিমের নেতৃত্বাধীন মিত্র বাহিনী শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়। পলাশীর যুদ্ধান্তে শুধুমাত্র বাংলাদেশে ইংরেজদের প্রভূত্ব স্থাপিত হয়। কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে মিত্র শক্তির পরাজয়ের ফলে উপমহাদেশের সার্বভৌম শক্তি পদানত হয়।