মেগাস্তিনিক প্রাচীন গ্রিসের একজন পর্যটন ও ভূগলবিদ। তিনি এশিয়া মাইনরে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রিক সেনাপতি সেলিওকাস খ্রিস্টপূর্ব ৩০২ অব্দে তাকে দ্রুত হিসেবে প্রথম চন্দ্রগুপ্তের রাজদরবারে প্রেরণ করেছিল। তিনি কয়েক বছর এদেশে অবস্থান করেন। মৌর্য শাসন সম্পর্কে তার অভিজ্ঞতা ইন্ডিকা নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন।
ফা হিয়েন
ফা হিয়েন প্রাচীন চৈনিক তির্থযাত্রী। তিনি মধ্য এশিয়া, ভারত এবং শ্রীলংকা ভ্রমন করেন এবং তার ভ্রমন বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করেন। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালের ফা হিয়েন নামক একজন চীনা পর্যটক ভারতে আসেন। তিনি দশ বছর ভারতবর্ষে অবস্থান করেছিলেন।।ফা হিয়েন তার ভারতে অবস্থান কালে তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সাতটি গ্রন্থ রচনা করেন।। এর মধ্যে ফো কুয়ো কিং বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
হিউয়েন সাঙ্গ
হিউয়েন সাঙ্গ ছিলেন বিখ্যাত চীনা বৌদ্ধ ভিক্ষুক, পর্যটক এবং অনুবাদক। ১৬৩০। খ্রিস্টাব্দে কোনো এক সময়ে তিনি ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিলেন। হর্ষবর্ধনের দরবারে তিনি আট বছর কাটান। মহাস্থরিব শীলভদ্র। ৫২৯-৬৫৪ খ্রিস্টাব্দে বৌদ্ধ শাস্রের একজন শাস্রজ্ঞ এবং দার্শনিক ছিলেন। তিনি নালন্দা মহাবিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন। হিউয়ের সাঙ্গ ২২ বছর ধরে শীলভদ্রের কাছে যাবতীয় শাস্র অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি সিদ্ধি নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। নালন্দা ভারতের বিহার রাজ্যে অবস্থিত একটি প্রাচীন উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র। প্রাচীন নালন্দা মহাবিহার বিহারের রাজধানী পাটনা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিন পূর্বে অবস্থিত। খ্রিস্টিয় ৪২৭ অব্দ থেকে ১১৯৭ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে নালন্দা ছিল একটি প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ শিক্ষা কেন্দ। এই মহাবিহারকে ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে অন্যতম মনে করা হয়। হিউয়েন সাঙ্গসহ অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল গুপ্ত সম্রাট শক্রাদিত্যের সময়ে। ১১৯৩ সালে তুর্কি সেনাপতি বখতিয়ার খলজি নালন্দা মহাবিহার ধ্বংস করে ফেলেন।১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ নালন্দা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
ইবনে বতুতা
ইবনে বতুতা ছিলেন সুন্নি মুসলিম পর্যটক, চিন্তাবিদ এবং বিচারক। তিনি ১৩০৪ খ্রিস্টাব্দে মরোক্কয় জন্মগ্রহণ করেন। পৃথিবী ভ্রমনের জন্য তিনি মূলত বিখ্যাত হয়ে আছেন। ১৩৩৩ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালে ইবনে বতুতা ভারতবর্ষে আগমণ করেন। সুলতানের সাথে পরিচয় ঘটলে তিনি এই পরিব্রাজককে কাজীর পদে নিযুক্ত করেন। ইবনে বতুতা অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে আট বছর ধরে উক্ত পদে বহাল ছিলেন। অতপর সুলতানের বিরাগভাজন হয়ে কারারুদ্ধ হন। সুলতান এই বিদেশী পর্যটকের উপর দয়া পরবশ হয়ে ক্ষমা প্রদর্শন করেন। ইবনে বতুতা ফখরুদ্দীন মুবারক শাহের রাজত্বকালে বাংলায় আসেন। বাংলাদেশে আসার তার মূল উদ্দেশ্য ছিল সিলেট গিয়ে হযরত শাহ জালালের সাথে দেখা করা। ইবনে বতুতা দক্ষিন ভারত থেকে সমুদ্র পথে চট্টগ্রাম আসেন।
চট্টগ্রাম বন্দরে অবতরণ করে ইবনে বতুতা হযরত শাহজালাল এর সাথে সাক্ষাৎ করতে সিলেট যান। তিনি সিলেট থেকে নদী পথে সোনারগাঁও আসেন। ইবনে প্রথম বিদেশি পর্যটক হিসাবে বাঙ্গালা শব্দ ব্যবহার করেন। জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক দ্রব্যাদির প্রাচুর্য ও স্বল্পমূল্য আর মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী ইবনে বতুতাকে আকৃষ্ট করলেও এদেশের আবহাওয়া তার পছন্দ হয়নি। এজন্য তিনি বাংলাদেশের নামকরণ করেন দোযখপুর আর নিয়ামত বা আশীর্বাদপুষ্ট নরক বা ধনপূর্ণ নরক। ইবনে বতুতার কিতাবুল রেহেলা নামক গ্রন্থে বাংলার অপরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়।