ভাষা পরিবর্তন ধ্বনির পরিবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত। ধ্বনি পরিবর্তন নানা প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয় । যেমন- পর্তুগিজ " আনানস" বাংলাইয়" " আনারস " একটি ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবর্তন ।
আদি স্বরাগম
উচ্চারণের সুবিধার জন্য বা অন্য কোনো কারণে শব্দের আদিতে স্বরধ্বনি এলে তাকে আদি স্বরাগম ।যেমন - স্নান>সিনান, স্কুল>ইস্কুল,স্টেশন> ইস্টিশন,স্ত্রী>ইস্ত্রী।এরুপ-আস্তাবল, আস্পর্ধা ইত্যাদি।
মধ্যস্বরাগম,বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি
সময় সময় উচ্চারণের সুবিধার জন্য সংযুক্ত ব্যঞ্জন ধ্বনির মাঝখানে স্বরধ্বনি আসে। একে বলা হয় মধ্য স্বরাগম বা বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি ।যেমন অ -রত্ন>রতন,শ্ররম>ধরম,স্বপ্ন>স্বপন,হ্ররষ>হরষ ইত্যাদি ।
ই-প্রীতি > পিরীতি,ক্লিপ>কিলিপ, ফিল্ম>ফিলিম ইত্যাদি ।
এ- গ্রাম>গেরাম,প্রেক>পেরেক,স্রেফ>সেরেফ ইত্যাদি।
অন্ত্যস্বরাগম
কোনো কোনো সময় শব্দের শেষে অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসে। এরুপ স্বরাগমকে বলা হয় অন্ত্যস্বরাগম। যেমন- দিশা>দিশা,পোখত>পোক্ত,বেঞ্চ>বেঞ্চি,স্ত্য>সত্যি ইত্যাদি।
অপিনিহিতি
পরের ই-কার আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্ত ব্যঞ্জন্ধ্বনির আগে ই-কার বা উ-কার উচ্চারিত হলে তাকে অপিনিহিত বলে । অর্থাৎ পরের "ঈ"কার ও উ"কার আগেই উচ্চারিত হওয়ার রীতিকে অপিনিহিতি বলে।যেমন-আশু>আউশ,আজি>আইজ,জালিয়া>জাইল্যা,সাধু>সাউধ,ইত্যাদি।
আসমীকরণ ( Dissimilation)
একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্য মাঝখানে স্বরধ্বনি যুক্ত হয় , তাকে অসমীকরণ বলে। যেমন- টপ+টপ>টপাটপ,ধপ+ধপ>ধপাধপ ইত্যাদি
স্বরসঙ্গতি ( Vowel Harmony )
একটি স্বরের প্রভাবে শব্দে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে । যেমন -দেশি>দিশি,মুলা>মুলো,বিলাতি>বিলিতি,ইচ্ছা>ইচ্ছে ইত্যাদি।
প্রগত (progressine) : আদিস্বর অনুযায়ী অন্তস্বর পরিবর্তিত হওয়াকে প্রগত স্বরসঙ্গতি বলে । যেমন মুলা>মুলো তুলা>তুলো ইত্যাদি ।
পরাগত ( Regressive) : অন্ত্যস্বরের কারণে আদ্যস্বর পরিবর্তত হলে প্রাগত স্বরসঙ্গতি হয়।যেমন - আখো>আখুয়া>এখো , দেশি>দিশি ইত্যাদি ।
মধ্যগত (Mutual )ঃ আদ্যস্বর ও অন্ত্যস্বর অনুযায়ী মধস্বর পরিবর্তিত হলে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন-বিলাতি>বিলিতি ইত্যাদি ।
অন্যোন্য (Reciprocal): আদ্য ও অন্ত্য দুই স্বরি পরস্পর প্রভাবিত হলে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি হয় ।যেমন- মোজা> মুজো ইত্যাদি।
সম্প্রকর্ষ বা স্বরালোপ
দ্রুত উচ্চারণের জন্য শব্দের আদি, অন্ত্য বা মধ্যবর্তী কনো স্বরধ্বনির লোপকে বলা হয় সম্প্রকর্ষ ।যেমন- বসতি>বসতি,ইত্যাদি ।
আদিস্বরলোপ ঃ যেমন-আলাবু>লাবু>লাউ,উদ্ধার>উধার>ধার ইত্যাদি।
মধ্যস্বর লোপ ঃ যেমন- গামোছা>গামছা,অগুরু>অগ্রু,সুবর্ণ ইত্যাদি ।
অন্ত্যস্বর লোপ ঃ যেমন-আশা>আশ, আজি>আজ ,চারি>চার ইত্যাদি ।
ধ্বনি বিপর্যয়
শব্দের মধ্যে দুটো ব্যঞ্জনের পরস্পর পরিবর্তন ঘটলে তাকে ধ্বনি বিপর্যয় বলে। যেমন ইংরেজি বাকস>বাংলা বাসক,জাপানি রিকসা>বাংলা রিসকা ,পিশাচ>পিচাশ,লাফ>ফাল ইত্যাদি।
সমীভবন
শবমধ্যস্থ দুটি ভিন্ন ধ্বনি একে অপরের প্রভাবে অল্প-বিস্তার সমতা লাভ করে। এ ব্যাপারকে বলা হয় সমীভবন। যেমন জন্ম>জম্ম, কাঁদনা>কান্না,গল্প>গপ্প ইত্যাদি ।
বিষমীভবন
দুটো সম্বর্ণের একটির পরিবর্তনকে বিষমীভবন বলা হয়। যেমন- শরীর > শরীল, লাল> নাল ইত্যাদি ।
দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জনদ্বিত্বতা
কখনো কখণ জোর দেওয়ার জন্য শব্দের অন্তর্গত ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব উচ্চারণ হয় , একে বলে দ্বিত্ব ব্যঞ্জন বা ব্যঞ্জন দ্বিত্বতা। যেমন- পাকা>পাক্কা,সকাল>সক্কাল ইত্যাদি।
ব্যঞ্জন বিকৃত
শব্দ-মধ্যে কোনো কোনো সময় কোনো ব্যঞ্জন পরিবর্তিত হয়ে নতুন ব্যঞ্জনধ্বনি হয় । একে বলে ব্যঞ্জন বিকৃতি । যেমন- ধোবা>ধোপা,কবাট>কপাট,ধাইয়া>দাইমা ইত্যাদি ।
অন্তর্হতি
পদের মধ্যে কোনো ব্যঞ্জন ধ্বনি লোপ পেলে তাকে অন্তর্হতি বা বর্ণলোপ ।যেমন-ফাল্গুন>ফাগুন,ফলাহার>ফলার,আলাহিদা>আলাদা ইত্যাদি ।
অভিশ্রুতি
বিপর্যস্ত স্বরধনি পূর্ববর্তী স্বরধ্বনির সাথে মিলে গেলে এবং তদনুসারে পরবর্তী স্বরধ্বনির পরিবর্তন ঘটলে তাকে বলে অভিশ্রুতি ।যেমন- করিয়া থেকে অপিনিহিতির ফলে "কইরিয়া"কিংবা বিপর্য্যের ফলে "কইরা" থকে অভিশ্রুতিজাত "করে"।
ক্ষীণায়ন ঃ শব্দ মধ্যস্তিত মহাপ্রাণ ধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনিতে পরিণত হলে তাকে ক্ষীণায়ন বলে।যেমন-পাঁঠা>পাঁটা,কাঠ>কাট ইত্যাদি ।
পীনায়নঃ শব্দ মধ্যস্তিত অল্পপ্রাণ ধ্বনি মহাপ্রাণ পরীণত হলে তাকে পীনায়ন বলে । যেমন- কাঁটাল> কাঁঠাল, পুকুর>পুখুর ইত্যাদি ।