বৈশ্বিক উষ্ণায়ন (Global warming) বর্তমান পৃথিবীতে পরিবেশগত প্রধান সমস্যাসমূহের মধ্যে অন্যতম। একশত বছর পূর্বের গড় তাপমাত্রার তুলনায় প্রায় ০.৬০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীগণ কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জলবায়ুগত পরিবর্তন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী করেছেন যে, একুশ শতকের সমাপ্তিকালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা প্রায় আরও অতিরিক্ত ২.৫০ থেকে ৫.৫০ সেলসিয়াস যুক্ত হতে পারে।
মানব বসতিহীন বরফাচ্ছন্ন মহাদেশ এন্টার্কটিকা। পৃথিবীর মোট জমাটবদ্ধ বরফের ৯০% এন্টার্কটিকা মহাদেশ রয়েছে। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের ও পর্বতের চুড়ার বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে। বিজ্ঞানীদের হিসেব অনুযায়ী গ্রিনহাউজ প্রভাব পৃথিবীর কয়েকটি দেশে যথা- কানাডা, রাশিয়া, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, দক্ষিণ আমেরিকা প্রভৃতি দেশগুলোর জন্য সাফল্য বয়ে আনবে। এ কারণে ঐসব অঞ্চলের লাখ লাখ একর জমি বরফমুক্ত হয়ে চাষাবাদ ও বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে। অন্যদিকে দুর্ভোগ বাড়বে পৃথিবীর প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকার দরিদ্র অধিবাসীদের।
মালদ্বীপ ভারত মহাসাগরের অনেকগুলো দ্বীপ নিয়ে গছিত। গ্রিন হাউস ইফেক্টের কারণে দেশটির অস্তিত্ব আজ হুমকির সন্মুখীন। সমুদ্রের তলদেশে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দেশটির সরকার অন্য দেশে জমি ক্রয়ের চিন্তা করছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে মালদ্বীপের অস্তিত্ব। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকারীয় প্যানেল এর ধারণা মতে, সমুদ্রের উচ্চতা ৫৮ সেন্টিমিটার বাড়লে ২১০০ সাল নাগাদ; মালদ্বীপের বেশির ভাগ নিম্নাঞ্চলের দ্বীপগুলো সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, ২০০৯ সালের ১৭ অক্টোবর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে ডাওয়ার ঝুঁকির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ভারত মহাসাগরের তলদেশে গিয়ে বৈঠক করেন তৎকালীন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ ও মন্ত্রিসভা।
গ্রিন হাউস ইফেক্টের কারণে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উপকলীয় এলাকার এক বিরাট অংশ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জাতিসংঘ তার সতর্কীকরণে বলেছে পরবর্তী ৫০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩ ফুট (= ৯১.৪৪ সে.মি.) বাড়লে তাতে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী একটি অংশ প্লাবিত হবে এবং প্রায় ১৭ শতাংশ ভূমি পানির নিচে চলে যাবে। আনুমানিক ৩ কোটি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, ফসল জমি হারিয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। UNFCCC – এর এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে ২০৫০ সাল নাগাদ প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে উদ্বাস্তু হবে।
২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংক বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ দিক চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো- মরুকরণ, বন্যা, ঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং কৃষিক্ষেত্রে অধিকতর অনিশ্চয়তা। সেই তালিকার ৫টি ভাগের একটিতে শীর্ষ ঝুঁকিপূর্ণসহ ৩টিতে নাম আছে বাংলাদেশের। বৈশ্বিক ঝুঁকিতে থাকা পাঁচটি ক্যাটাগরির দেশের তালিকা-