ইংল্যান্ডের মাটি থেকে রস আহরণ করে ক্রিকেটের বিরাট মহীরুহ আজ বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে।
খেলারআইন: ক্রিকেট খেলার নিয়মাবলী বিধিবদ্ধ হয় ১৭৪৪ সালে। কতিপয় ‘নোবেলমেন এন্ড জেন্টলমেন’ কর্তৃক ১৭৭৪ সালে নিয়মাবলী সংশোধিত হয়। ১৭৮৭ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব বা এমসিসি প্রতিষ্ঠিত হয়ে ক্লাবটি প্রধান ক্রিকেট-খেলুড়ে দেশসমূহের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে ১৭৮৮ সালে সংশোধিত ক্রিকেট আইন প্রকাশ করে।
খ) খেলারনিয়মাবলী
ক্রিকেট দু'টি দলের মধ্যে ব্যাট ও বলের খেলা।
উপকরণ
পিচ: দৈর্ঘ্য ২২ গজ (৬৬ ফুট বা ২০.১২ মি.)। প্রস্থ ১০ ফুট (৩.০৫ মি.)।
বল: ব্যাস ২.৮ - ২.৮৭ ইঞ্চি (৭.১৩ -৭.২৯) সে.মি. - পুরুষদের জন্য।
পরিধি ৮.৮ - ৯ ইঞ্চি (২২.৪-২২.৯ সে.মি.)।
ওজন প্রায় ১৬০-১৬৩ গ্রাম।
উইকেট: মাটি থেকে স্টাম্পের উচ্চতা ২৮ ইঞ্চি। তিনটি স্ট্যাম্পের মাথায় দুইটি করে বেইল থাকে এবং প্রত্যেক উইকেটে ৫টি করে দুই পার্শ্বে মোট ১০ টি লাঠি থাকে।
খেলোয়াড়ওআম্পায়ার
দুইটি দলে ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকে। মাঠে খেলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন দুইজন আম্পায়ার। মাঠের বাইরে থাকেন থার্ড আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারি। নিখুঁত সিদ্ধান্তের জন্য তারা প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে থাকেন।
জয়-পরাজয় :
ক্রিকেট খেলার জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় রান বা উইকেটে। খেলায় ব্যাটিং পক্ষের উদ্দেশ্য থাকে ফিল্ডিং বেষ্টনীকে ফাঁকি দিয়ে বল মেরে রান সংগ্রহ করা। আর বোলিং পক্ষের লক্ষ্য হয় প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে যতটা সম্ভব রান নিতে না দেওয়া এবং ব্যাটসম্যানকে আউট করা হয়। একজন ব্যাটসম্যানকে ৯ উপায়ে আউট করা যায়। কিন্তু নো-বল (আইন বহির্ভূত বল) এ ব্যাটসম্যানকে রান আউট ছাড়া অন্য কোনাভাবে আউট করা যায় না। হ্যাটট্রিক হলো একজন বোলার তিনজন ভিন্ন ব্যাটসম্যানকে পরপর তিন বলে আউট করার স্বীকৃতি। ব্যাটসম্যান বলকে ব্যাট দ্বারা আঘাত করতে ব্যর্থ হলেও যে রান সংগ্রহ করে তা ‘বাই’ (bye) হিসাবে ধরা হয়। কোন রান ছাড়াই বল সম্পন্ন হলে তা ‘ডট বল' হিসাবে লিখিত হয়। নির্দিষ্ট ওভারে দুই দলে স্কোর সমান হয়ে গেলে খেলা টাই হয়ে যায়। ক্রিকেটের টাই-ব্রেকিং পদ্ধতি হল বোল আউট। আবহাওয়াজনিত কারণে খেলা বিঘ্নিত হলে ডাকওয়ার্থ-লুইস (Duckworth-Lewis Method) পদ্ধতিতে খেলার ফলাফল নির্ধারিত হয়। বৃষ্টি বিঘ্নিত জিম্বাবুয়ে ও ইংল্যান্ডের একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজে ১৯৯৭ সালে প্রথম ডার্কওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
ক্রিকেটেআউটহওয়ারউপায়
১. Caught (ক্যাচ)
২. Bowled (বোল্ড )
৩. Stumped (স্ট্যাম্প)
8. Run Out (রান আউট)
৫. Timed Out (টাইম আউট)
৬. Hit the ball twice
৭. Hit Wicket (হিট উইকেট)
৮. Leg Before Wicket (LBW)
৯. Obstructing the field
আইন পরিবর্তনের ফলে Handle the ball আউটটি Obstructing the field এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
International Cricket Council (ICC): বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা। ১৫ জুন ১৯০৯ সালে ইংল্যান্ডের লর্ডসে Imperial Cricket Conference (ICC) নামে এর যাত্রা শুরু। বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে সংস্থাটির সদর দপ্তর। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ ১২ টি। যথা- ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান, ওয়েস্টইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ (১০তম), আয়ারল্যান্ড (১১তম) এবং আফগানিস্তান (১২তম)। ২২ জুন, ২০১৭ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত আইসিসির সভায় আফগানিস্তান ও আয়ারল্যন্ড সংস্থাটির পূর্ণ সদস্য পদ লাভ করে।
গ) খেলারধরন
১।টেস্টক্রিকেট: আইসিসি’র পূর্ণ সদস্য দেশ টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে পারে। টেস্ট ক্রিকেট সাধারণত ৫ দিনে হয়। প্রতি দল দু'টি করে ইনিংস খেলে।
১৫-১৯ মার্চ ১৮৭৭ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত প্রথম টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৪৫ রানে জয়লাভ করে।
নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচে জয় লাভ করে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ।
আশেজ বা দি অ্যাশেজ (The Ashes) ক্রিকেটের ট্রফিবিশেষ। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজ বিজয়ী দলকে ১৮৮২ সাল থেকে এ ট্রফি প্রদান করা হয়। উনবিংশ শতকের শেষদিকে ইংরেজ ক্রিকেট দল অস্ট্রেলিয়ার কাছে ওভালে পরাভূত হলে ইংরেজরা বিদ্রুপাত্মকভাবে শোক প্রকাশ করে। এ প্রেক্ষিতেই ধারাবাহিকভাবে ইংরেজরা একটি ছাইপূর্ণ পাত্র উপস্থাপন করে যা পরবর্তীতে ট্রফির মর্যাদা লাভ করে।
২) একদিনেরআন্তর্জাতিকক্রিকেট: এক দিনের আন্তর্জাতিকে দুই দল ৫০ ওভার (১ ওভার = ৬টি বৈধ বল) করে ব্যাটিং করে থাকে। খেলায় প্রথম দশ ওভার দুইজন ফিল্ডার পনেরো গজের বাইরে থাকতে পারে। ৫ জানুয়ারি, ১৯৭১ মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের খেলার মধ্য দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়। খেলায় অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে জয়ী হয়।
৩) টুয়েন্টি২০: টুয়েন্টি ২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার নবীনতম সংস্করণ। এখানে প্রতিটি দল ২০ ওভার করে ব্যাটিং করে। ইংল্যান্ডে টুয়েন্টি২০ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শুভ সূচনা ঘটে এবং ২০০৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক টুয়েন্টি ২০ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
ঘ) আন্তর্জাতিকআসর
১) আইসিসিক্রিকেটবিশ্বকাপ: ১৯৭৫ সালের ৭ জন প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর্দা ওঠে। প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। এরপর থেকে প্রতি ৪ বছর পরপর বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম আসরের ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭ রানে অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করে শিরোপা অর্জন করে এবং ক্লাইভ লয়েড ৯৫ বলে ১০২ রান করে ম্যাচ সেরা (Man of the Match) নির্বাচিত হন। ৫টি শিরোপা জিতে বিশ্বকাপের সফলতম দল অস্ট্রেলিয়া। তিনবার ফাইনালে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো শিরোপা জয় করতে পারেনি ইংল্যান্ড।
২) আইসিসিবিশ্বটুয়েন্টি২০
২০০৭ সালে আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতার প্রথম আসর অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। ফাইনাল খেলায় ভারত ৫ রানে প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে পরাজিত করে শিরোপা জয় করে।
৩) আইসিসিচ্যাম্পিয়নট্রফি
আইসিসি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কর্তৃক আয়োজিত একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। মর্যাদার দিক থেকে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পরেই আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অবস্থান। ১৯৯৮ সালে প্রতিযোগিতাটির প্রথম আসর (আইসিসি নক-আউট টুর্নামেন্ট নামে) বসে ঢাকায়। দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪ উইকেটে পরাভূত করে প্রথম শিরোপা জয় করে। দুইবার করে শিরোপা জিতে অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত টুর্নামেন্টের সফলতম দল ।
ঙ) বিখ্যাতক্রিকেটার
ক্রিকেটার
দেশ
পরিচিতি
ডন ব্রাডম্যান
অস্ট্রেলিয়া
টেস্টে গড় ৯৯.৯৪ নিয়ে সর্বাধিক (১২টি) ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন।
শচীন টেন্ডুলকার
ভারত
সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। ‘লিটল মাস্টার’ নামে খ্যাত। ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়। ২০১৩ সালে নিজ শহর মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামেওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিদায়ী টেস্ট খেলেন। প্রথম শচীন টেন্ডুলকার ভারত ক্রিকেটার হিসাবে ওয়ানডেতে অপরাজিত ২০০ রান করেন। (বিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০১০ খ্রি.)। ওডিআই (৪৯টি) ও টেস্ট ম্যাচ (৫১টি) মিলিয়ে মোট ১০০টি শতক করেন। তিনি ভারতের বেসামরিক পদক ‘পদ্মশ্রী' (১৯৯৯ খ্রি.) ‘পদ্মবিভূষণ’(২০০৮ খ্রি.) ভারতরত্ন' (২০১৪ খ্রি.) উপাধি লাভ করেন।
নাসের হোসেন
ইংল্যান্ড
রিচার্ড হ্যাডলি
নিউজিল্যান্ড
অলরাউন্ডার।
ব্রায়ান লারা
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
১৯৯৪ সালে ডারহাম এর বিপক্ষে ৫০১ রানের অনবদ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস খেলেন। এটি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
কোর্টনি ওয়ালস
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ৫০০ উইকেট শিকারী।
ক্লাইভ লয়েড
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ শিরোপাজয়ী অধিনায়ক।
ক্রিস গেইল
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ওডিআই বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথম দ্বিশতক রানের অধিকারী। টি২০ ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসাবে ১০,০০০ রান করেন।
জ্যাক ক্যালিস
দক্ষিণ আফ্রিকা
সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ইমরান খান
পাকিস্তান
‘অক্সফোর্ড ব্লু’ নামে পরিচিত।
মোহাম্মদ ইউসুফ
পাকিস্তান
টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এক Calender year এ সর্বাধিক ১৭৮৮ রান সংগ্রহকারী।
জালাল উদ্দিন
পাকিস্তান
একদিনের ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিককারী বোলার। ১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ স্বীকৃতি অর্জন করে।
শোয়েব আখতার
পাকিস্তান
২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘণ্টায় ১৬১.৩ কিমি, (১০০.২২ মাইল) গতিতে বল করেন। এটি ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ গতির বল।