সপ্তদশ শতকে সুদূর আরাকানে সমৃদ্ধ সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছিল। আরাকানকে বাংলা সাহিত্যে 'রোসাং
বা “রোসাঙ্গ' নামে উল্লেখ করা হয়েছে । বার্মার উত্তর-পশ্চিম সীমায় এবং চট্রগ্রামের দক্ষিণে সমুদ্রের
তীরে এব অবস্থান ছিল। আরাকানের অধিবাসীরা সাধারণভাবে বাংলাদেশে “মগ' নামে পরিচিত ।
সুদূর আরাকানে বিজাতীয় ও ভিন্ন ভাষাভাষী রাজার অনুগ্রহ লাভ করে সপ্তদশ শতকে বঙ্গ ভাষাভাষী
যে সকল প্রতিভাশালী কবির. আবির্ভাব ঘটেছিল, তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান অবদানে বাংলা
সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। রাজসভার কবিদের মধ্যে দৌলত কাজী, আলাওল, কোরেশী মাগন ঠাকুর, মরদন, আবদুল করীম খোন্দকার, শমশের আলীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মরদনের বিখ্যাত কাব্যগ্যন্থ " নসীরানামা" ।
দৌলত কাজী (১৬০০ - ১৬৩৮ খ্রি.)
আরাকান রাজসভার আদি কবি এবং আরাকান রাজসভার প্রথম বাঙ্গালি কবি। তিনি লৌকিক কাহিনীর আদি
রচয়িতা । তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের নাম “সতীময়না ও লোরচন্দ্রানী”। নায়িকার
বারমাসের সুখ দুঃখের বর্ণনাকে বারমাস্যা বলে ।
আলাওল (১৬০৭ - ১৬৮০খ্রি.)
আরাকান রাজসভার কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তথা মধ্যযুগের সবচ্যে উল্লেখযোগ্য মুসল্মান কবি ছিলেন আলাওল। তিনি সপ্তদশ শতর্কের একজন বিখ্যাত কবি ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার
'জোবরা' গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন।
মহাকবি আলাওলের জন্মস্থান নিয়ে মতভেদ আছে -
* ড. মুহম্মদ এনামুল হকের মতে : চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার জোবরা গ্রামে
* ভ. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে : বর্তমান ফরিদপুর জেলার জামালপুরে । আলাওলের সাহিত্যকর্ম :
* তোহফা : একটি নীতিকাব্য |
* পদ্মাবতী : মালিক মুহম্মদ জায়সী কর্তৃক হিন্দি ভাষায় রচিত “পদুমাবৎ' অবলম্বনে আলাওল
'পদ্মাবতী কাব্য রচনা করেন । এই অনুবাদ গ্রহটি কবির প্রথম রচনা ।
আলাওলের বিষ্যাত পদ্মাবতী গ্রন্থে পদ্মাবতীর রূপ বর্ণনা খণ্ডে মহাকবি বলেছেন-
রক্ত উৎপল লাজে জলান্তরে বৈসে।
তাম্বুল (পান ) রাতুল হৈল অধর পরশে ।(অর্থ - ঠোটের পরশে পান লাল হলো ।)
কোরেশী মাগন ঠাকুর
মাগন ঠাকুর রোসাঙ্গরাজের প্রধানমন্ত্রি ছিলেন। তারঁ রসিদ্ধ কাব্যগ্রন্থ " চন্দ্রাবতী"। কবি আলাওলের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তিনি প্রসিদ্ধি লাভ করেন ।