যুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। যুক্তরাজ্যের রানি (বা রাজা) অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান। সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের নাম ‘দি লজ’ (The Lodge)। এটি ক্যানবেরায় অবস্থিত।
আইন
আইনের ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Law'. ইংরেজি 'Law' শব্দটির আভিধানিক উৎপত্তি টিউটনিক মূল শব্দ 'Lag' থেকে। 'Law' শব্দের অর্থ স্থির বা অপরিবর্তনীয় এবং সকলের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। আইন (Law) বলতে সমাজ স্বীকৃত এবং রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত নিয়ম কানুনকে বোঝায় যা মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
অধ্যাপক হল্যান্ডের মতে, “আইন হলো মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের এমন কতকগুলো সাধারণ নিয়ম যা সার্বভৌম শক্তি কর্তৃক প্রযুক্ত”।
অস্টিন বলেন, “আইন হলো সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের আদেশ”।
স্পেন্সার এর মতে, “আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর বিরোধী”।
জন লক এর ভাষায়, “যেখানে আইন নেই, সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারে না।”
লাস্কি এর মতে, “আইন রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে।”
আইনের উৎস
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক হল্যান্ড এর মতে, আইনের উৎস ৬টি যথা- ১) প্রথা, ২) ধর্ম, ৩) বিচার সংক্রান্ত রায়, ৪) বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা, ৫) ন্যায়বোধ এবং ৬)আইনসভা। ওপেনহাইম জনমতকেও আইনের উৎস বলে মনে করেছেন। কেননা জনমতের প্রভাবে অনেক সময় সরকার আইন প্রণয়ন বা প্রচলিত আইন পরিবর্তন ও সংশোধন করে থাকে।
আইনের প্রকারভেদ: আইন সাধারণত তিন প্রকার। যথা- সরকারি আইন, বেসরকারি আইন এবং আন্তর্জাতিক আইন। এছাড়াও বহুবিধ আইনের অস্তিত লক্ষ্য করা যায়। যেমন-১) প্রকৃতির আইন, ২)
প্রাকৃতিক আইন, ৩) প্রথাসিদ্ধ আইন, ৪) প্রচলিত আইন, ৫) নৈতিক আইন, ৬) সাংবিধানিক আইন, ৭) সাধারণ আইন, ৮) ন্যায়পরতা আইন, ৯) প্রশাসনিক আইন ১০) উপ- বিধি আইন ১১) গণ আইন ১২) সামরিক আইন, ১৩) সৈনিক আইন ১৪) রাষ্ট্রীয় আইন।
প্রাকৃতিক আইন: অধ্যাপক হল্যান্ড তাঁর ‘The Elements of Jurisprudence’ গ্রন্থে প্রকৃতিক আইন সম্পর্কে বলেন, “যে আইন নৈতিকতার অংশ হিসেবে মানবজাতির স্বার্থে পরিচালিত হয়ে তাদের দায়িত্বসমূহ নিয়ে গবেষণা করে, তাকে প্রাকৃতিক আইন বলে। প্রাকৃতিক আইন’ ধারণাটি সর্বপ্রথম প্রাচীন গ্রীক দর্শনে পাওয়া যায়। গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটলকে প্রায়শই ‘প্রাকৃতিক আইন’ এর জনক বলা হয়ে থাকে। ‘বাইবেল’ এ প্রাকৃতিক আইন বিষয়ে পরোক্ষ উল্লেখ ছিল এবং পরবর্তীতে তা থেকেই মধ্যযুগীয় ক্যাথলিক দার্শনিক আলবার্ট দ্য গ্রেট, সেন্ট টমাস একুইনাস প্রমুখ এই আইনের বিকাশ ঘটান। একুইনাস এরিস্টটলীয় দর্শনের সঙ্গে খ্রিষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের সমন্বয় সাধন করেন। হুগো গ্রোসিয়াস প্রাকৃতিক আইনের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তি স্থাপন করেন।
সাংবিধানিক আইন: একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংবিধানে বর্ণিত আইনসমূহকে সাংবিধানিক আইন বলা হয়। সাংবিধানিক আইন রাষ্ট্রের বিধানাবলী, সরকার ও বিচার বিভাগের গঠন, ক্ষমতা ও পরস্পরের সম্বন্ধ নির্ণয় করে।
সংবিধান: রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের কিছু নির্দিষ্ট বিধি-বিধান বা আইন থাকে। এই বিধি-বিধানকে রাষ্ট্রের সংবিধান বা শাসনতন্ত্র বলে। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের মতে, “সংবিধান হল রাষ্ট্রের সেই জীবনধারা যা রাষ্ট্র নিজেই বেছে নিয়েছে।” (Constitution is the way of life the state has chosen for itself)
ব্লাসফেমি আইন: ব্লাসফেমি (ধর্ম অবমাননা) ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য এক ধরনের শাস্তিমূলক আইন। এই আইন যুক্তরাজ্যে প্রথম চালু হয়। ব্রিটিশ ভারতীয় লেখক সালমান রুশদিকে তার বির্তকিত উপন্যাস 'The Satanic Verses' (ইসলাম ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত) প্রকাশের জন্য ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনী ১৯৮৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ডাদেশ (ফতোয়া) দেয়। কিন্তু আইনের চোখে সে কোন অপরাধ করেনি বিধায় তার বিচারও হয়নি।